এত দিন এম এ কাদিরের দেহাবশেষ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে সমাহিত ছিল। ১৯৮৩ সালে তাঁর নামেই এই সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরে অবস্থিত কাদিরাবাদ সেনানিবাস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের উপস্থিতিতে এম এ কাদিরের দেহাবশেষ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের সমাধি থেকে উত্তোলন করা হয়। পরে জাতীয় ও সেনাবাহিনীর পতাকা আবৃত সুসজ্জিত একটি কফিনে করে তা হেলিকপ্টারযোগে কাদিরাবাদ সেনানিবাসে নিয়ে আসা হয়। কফিন গ্রহণ করেন এরিয়া কমান্ডার বগুড়ার মেজর জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান ও কমান্ড্যান্ট ইসিএসএমই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সামছুল আলম খান। এরপর যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এম এ কাদিরের দেহাবশেষ পুনঃসমাহিত করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সের কর্নেল কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল ওয়াদুদসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। এম এ কাদিরের ছেলে সাংবাদিক নাদিম কাদির ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এম এ কাদির ১৯২৯ সালের ২ জানুয়ারি রংপুরের বদরগঞ্জ থানার মোস্তফাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে তিনি কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্সে কমিশনপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭০ সালে তিনি তৎকালীন ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান হিসেবে পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে তিনি এ সংস্থার জন্য নির্ধারিত বিস্ফোরক দ্রব্যাদি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। ২০০৭ সালে তাঁর সমাধিস্থান চিহ্নিত করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং সরকারের নির্দেশে তাঁর দেহাবশেষ তাঁরই নামে নামকরণ করা সেনানিবাসে গতকাল পুনঃসমাহিত করা হলো।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেজর সুলতান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ কাদির সেনাবাহিনীর তথা ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের গৌরবের প্রতীক। তাই তাঁর দেহাবশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসের হোম অব স্যাপার্সে সমাহিত করা হলো।
এম এ কাদিরের বড় ছেলে সাংবাদিক নাদিম কাদির বলেন, ‘সরকার যথাযথ স্থানে আমার বাবার দেহাবশেষ পুনঃসমাহিত করায় আমি ও আমার পরিবার খুশি।’
0 comments:
Post a Comment