রাহেলা খাতুন, বয়স ২২, এক পুত্রসন্তান জন্মের চার বছর পর পরবর্তী সন্তানের জন্মের তারিখ খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। গভীর রাতে প্রসব বেদনা উঠল। কিন্তু প্রস্তুতি শেষ করে হাসপাতালে তাকে নিতে অনেক দেরি হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে সে জন্ম দিল মৃত কন্যাসন্তান।
* পুষ্টিকর খাবার দেওয়া।
* জন্মদান বিষয়ে সাহস জোগানো।
* ভারী কোনো কাজ করতে না দেওয়া।
* সব সময় স্বাস্থ্যগত দিকটি নজরে রাখা।
* ভবিষ্যতে যেকোনো বিপদের জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখা।
তবে নিচের কয়েকটি বিষয় গর্ভবতীর মধ্যে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেগুলো হলো_
প্রসবের সময় ছাড়া গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ বা প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তক্ষরণ বা গর্ভফুল না পড়া বিপদের লক্ষণ। তাই এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কোনো রকম চিন্তা না করে পরিবারের সবারই উচিত মাকে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। অন্যথায় তা বাচ্চা এবং মা দুজনের জীবনেই হুমকি ডেকে আনতে পারে।
গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর যেকোনো সময় যদি খিচুনি দেখা দেয় তবে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষায়িত হাসপাতালে মাকে ভর্তি করাতে হবে। খিচুনি একলামসিয়ার প্রধান লক্ষণ। তাই দ্রুত পদক্ষেপ ও চিকিংসা বাচ্চা এবং মা দুজনের জীবনকেই রক্ষা করতে পারে। তা না হলে এ রোগে দুজনই মারা যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথাব্যথা বা চোখে ঝাপসা দেখা পাঁচটি প্রধান বিপদ চিহ্নের মধ্যে একটি। তাই এ ব্যাপারে মায়েদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। যদিও গর্ভাবস্থায় মায়ের পায়ে সামান্য পানি আসা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। একটু বেশি হাঁটলে এ পানি চলেও যায়। কিন্তু যদি পায়ে অতিরিক্ত পানি আসে এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ও পা ভারি হয়ে আসে তবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর তিন দিনের বেশি জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব প্রধান বিপদ চিহ্নের একটি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যদি কেঁপে কেঁপে ভীষণ জ্বর আসে এবং প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হয়, তবে তা অনেক সময় মূত্রনালির সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে। সময়মতো উপযুক্ত চিকিংসা করলে অল্প সময়ে এ জটিলতা দূর হয়ে যায়।
বিলম্বিত প্রসব হলে
প্রসবব্যথা যদি ১২ ঘণ্টার বেশি হয় অথবা প্রসবের সময় যদি বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ বের হয়ে আসে, তবে বাসাবাড়িতে প্রসবের চেষ্টা না করে সবারই উচিত মাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।
এ ছাড়া গর্ভবতী মায়েদেরও এসব বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে। তা ছাড়া নিচের কয়েকটি বিষয়ে নিজেকেও খেয়াল রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সাধারণত মা ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করেন। পেটের ভেতর বাচ্চা ঘুমায় ও খেলা করে, যার অনুভূতি মা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা এবং সময় রয়েছে যা শুধু মা-ই অনুভব করেন। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে মা সেটা খুব দ্রুত বুঝতে পারেন। বাচ্চার অধিক নড়াচড়া বা কম নড়াচড়া দুটিই ক্ষতিকর এবং এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর ডাক্তারকে দেখানো উচিত।
গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর মায়ের রক্তচাপ লক্ষ রাখা জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ অনেক সময় মায়ের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় এবং এটি একলামসিয়ার একটি লক্ষণও। তাই যাঁরা আগে থেকেই রক্তচাপে আক্রান্ত বা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিজ ও বাচ্চা উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করা।
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে (সাধারণত তিন মাসের মধ্যে) যদি কোনো সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, রক্তক্ষরণ ও পেট শক্ত হয়ে যায় তবে দ্রুত ডাক্তারকে দেখানো উচিত। এ ক্ষেত্রে জরায়ু ছাড়া নালিতে (অন্যান্য স্থান যেমন : পেটের ভেতর, ডিম্বাশয়ের মধ্যে ইত্যাদি) গর্ভধারণ (যা একটোপিক প্রেগন্যান্সি নামে পরিচিত) হয়ে থাকে এবং অনেক সময় এটি ফেটে গিয়ে মায়ের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এ ক্ষেত্রে দ্রুত অপারেশন ছাড়া মাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।
এর বাইরেও গর্ভকালীন সাধারণ কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন_
* সকালে ওঠার পর যদি বেশি অসুস্থ বোধ হয় তবে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে হালকা কিছু যেমন_শুষ্ক টোস্ট বা সাধারণ বিস্কুট খেতে পারেন।
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
* দুশ্চিন্তা করবেন না।
* বমি হবে এই ভয়ে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করবেন না।
* অল্প অল্প করে প্রয়োজনে বারবার খাবার খান।
* বেশি মসলাযুক্ত খাবার পরিত্যাগ করুন।
* রাতে বুকজ্বলা শুরু হলে এন্টাসিড ট্যাবলেট চুষে খেতে পারেন।
* প্রয়োজনে ডাক্তার দেখান।
কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা
* প্রচুর পানি, আঁশযুক্ত খাবার ও শাকসবজি বেশি করে খান।
* নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করে মাংসপেশির টান ঠিক রাখুন।
* অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
* পা যতটা সম্ভব ওপরের দিকে রেখে শুয়ে থাকুন।
* রক্তচাপ পরিমাপ করাবেন।
* লবণ কম খাবেন।
সব মহিলারই গর্ভাবস্থায় যোনীর নিঃসরণ বেড়ে যায়। এটা সাধারণত সাদা হয়, তবে গন্ধ থাকে না। যদি যোনীর নিঃসরণ গন্ধযুক্ত, রঙিন হয় এবং আপনি অস্বস্তি বোধ করেন, তবে বুঝতে হবে আপনার যোনীতে জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
* সব সময় ধীরে ধীরে দাঁড়াবেন, কখনই আচমকা দাঁড়াবেন না।
* এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না।
* প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
* বেশি লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
* প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার যেমন_রান্না করা অথবা কাঁচা ফল এবং সবুজ শাকসবজি, সালাদ খাবেন।
* অল্প চর্বিযুক্ত ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাবেন।
* ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করবেন।
* ক্লান্তিবোধ হলে কিছু সময় বিশ্রাম নিন।
* যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা পরিহার করুন।
* প্রতিরাতে অন্তত ৮ ঘণ্টা এবং দিনে ২ ঘণ্টা ঘুমাবেন। প্রয়োজনে বিকেলে বিশ্রাম নিন।
* বাম কাত হয়ে ঘুমাবেন। এর ফলে বাচ্চার জন্য পুষ্টি ও অঙ্েিজন বহনকারী রক্তনালির ওপর চাপ পড়বে না।
0 comments:
Post a Comment