২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির পাঠানো হাইগেনস নভোযানের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেছেন, নভোযানটি টাইটানের পৃষ্ঠে পড়ার পর প্রথমে কিছুটা ধাক্কা খেয়ে ওপরে ওঠে, তারপর কিছুটা গড়িয়ে যায় এবং ১০ সেকেন্ডের মতো সময় ধরে কেঁপে কেঁপে পরে স্থির হয়।
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখেছেন, হাইগেনস নভোযানটি টাইটান স্পর্শ করার পর মাটিতে ৪.৭ ইঞ্চি পরিমাণ গর্ত করেছিল এরপর তা ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি পরিমাণ গড়িয়ে যায় এবং চার-পাঁচবারের মতো কাঁপতে কাঁপতে পরে স্থির হয়।
গবেষক স্টেফান স্রোডার জানিয়েছেন, টাইটানে হাইগেনসের ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করার তথ্য বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, শনির এ উপগ্রহটির ভূপৃষ্ঠ নরম ও ভেজা বালিতে পূর্ণ।
টাইটান গ্রহ নিয়ে আগের করা বেশ কিছু গবেষণায় গবেষকেরা জানিয়েছেন, টাইটানের ভূপৃষ্ঠ যথেষ্ট নরম। তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণায় গবেষকেরা দাবি করেছেন, টাইটানের নরম ভূপৃষ্ঠের ওপর কিছুটা শক্ত আবরণ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এরিক কারকোসকা এ প্রসঙ্গে জানান, ‘টাইটানের ভূপৃষ্ঠের গঠন অনেকটাই কোনো কিছুর ওপর পড়া তুষারের মতো। যদি সন্তর্পণে হাঁটা যায়, তবে শক্ত ভূপৃষ্ঠের মতোই হাঁটা সম্ভব তবে। জোরে পা ফেললে তা ভেঙে চৌচির হয়ে যেতে পারে।’
গবেষকেরা আরও জানিয়েছেন, হাইগেনস যখন টাইটান পৃষ্ঠে অবতরণ করেছিল, তখন সেই পৃষ্ঠ যথেষ্ট শুকনো ছিল। টাইটান পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর তাই মেঘের মতো ধুলো তৈরি হয়েছিল সেখানে। গবেষকরা ধারণা করেন, টাইটানে নিয়মিত ইথেন ও মিথেনের বৃষ্টি হয়। কিন্তু হাইগেনস অবতরণের বেশ আগে থেকেই হয়তো সেখানে কোনো বৃষ্টি হয়নি।
সম্প্রতি বিবিসি জানিয়েছে, কিউরিওসিটির মঙ্গলযাত্রার পরে এবার শনির উপগ্রহ টাইটানে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই নতুন অভিযানে টাইটানের বৃহত্তম হ্রদ, ‘লাইজেইয়া মারে’কে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চান বিজ্ঞানীরা। ‘সেনার’ নামে একটি বেসরকারি প্রযুক্তি ও কারিগরি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্পেনের একটি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র এই অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করেছে। প্রকল্পটির নাম, ‘টাইটান লেক ইন-সিটু স্যাম্পলিং প্রোপেলড এক্সপ্লোরার’ (ট্যালিস)। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় গ্রহবিজ্ঞান সম্মেলনে (ইপিএসসি) ওই পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।
পৃথিবীর মতোই টাইটানে রয়েছে ঘন বায়ুমণ্ডল। তবে সেখানকার শীতল সাগরে পানির পরিবর্তে কিছুটা ঘন তরল পদার্থ রয়েছে। টাইটানের উত্তর গোলার্ধের বেশির ভাগজুড়েই রয়েছে হাইড্রো-কার্বনপূর্ণ হ্রদ, সাগর ও বিভিন্ন নদী।
নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, টাইটানের উত্তর মেরুর বৃহত্তম হ্রদ লাইজেইয়া মারে ভাসবে রোবটবাহী নৌকাসদৃশ নভোযান। এ অভিযানে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
১৬৫৫ সালে নেদারল্যান্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেনস শনির উপগ্রহ টাইটান আবিষ্কার করেন। গবেষকেরা চলতি শতকের গোড়ার দিকেই টাইটানের পূর্ণ মানচিত্র তৈরি করতে ক্যাসিনি-হাইগেনস পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। উপবৃত্তীয় গোলক আকৃতির টাইটানের সঙ্গে অনেক সামঞ্জস্য থাকার কারণে অনেক সময়ই একে গ্রহসদৃশ উপগ্রহ বলা হয়। টাইটানের ব্যাস চাঁদের দেড় গুণ এবং ভর চাঁদের ১.৮ গুণ। এটি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ।
গবেষকরা ধারণা করেন, টাইটান মূলত বরফ আর পাথুরে পদার্থের তৈরি। টাইটানের বায়ুমণ্ডলে রয়েছে নাইট্রোজেন। এখানেই হয়তো রয়েছে হাইড্রোকার্বনের হ্রদ, যাতে রয়েছে প্রাণ ধারণের উপযোগী পরিবেশ। হাফিংটন পোস্ট।
0 comments:
Post a Comment