পূর্ণিমার প্রভাবে ১১ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় এসব রাজ্যে সোমবার সব স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সোমবারের সব কর্মসূচি।
জনগণকে স্যান্ডির ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, “এটা বড় আর ভয়ঙ্কর ধরনের ঘূর্ণিঝড়।”
ক্যারিবীয় সাগরে সৃষ্টি হওয়ার পর জ্যামাইকা ও কিউবার ওপর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাওয়ার পথে অন্তত ৬৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে স্যান্ডি। ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ক্যারিবিয়া অঞ্চলের এ দুই দেশে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫ কোটি মানুষ এই ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার বলছে, বাংলাদেশ সময় সোমবার বিকাল ৩টায় নিউ ইয়র্ক উপকূল থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল স্যান্ডি। ঘণ্টায় মাত্র ১৫ মাইল বেগে এগোতে থাকা হারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন এই ঘূর্ণিঝড় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে যুক্তরাষ্ট্র উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার ট্রেডিং ফ্লোর বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষও। অবশ্য ইলেকট্রনিং ট্রেডিং অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ নিয়েছে। এর আগে ১৯৮৫ সালে ঘূর্ণিঝড় গ্লোরিয়ার কারণে এই স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছিল।
স্যান্ডির কারণে নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ওয়াশিংটন, ডেলওয়ারে, কানেকটিকাট ও বস্টন বিমানবন্দরে গত দুই দিনে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রয়েছে।
গত বছরের অগাস্টে হারিকেন আইরিনের প্রভাবে ৪ দিনে মোট ১৪ হাজার ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতায় এক প্রকার থমকে গেছে সদাব্যাস্ত নিউ ইয়র্কের জনজীবন। ব্রডওয়ে থিয়েটার ও নিউজার্সির ক্যাসিনোগুলো সোমবার খুলছে না। মেরিল্যান্ডের কর্পোরেট অনুষ্ঠানগুলোও স্থগিত করা হয়েছে।
এক বছর ধরে সংস্কার চলার পর স্ট্যাচু অব লিবার্টি গত রোববার খুলে দেওয়া হলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তা আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। স্যান্ডির আঘাত হানার শঙ্কা নিয়ে নিউ ইয়র্কবাসীকে দেখা যায় পানির বোতল, রুটি ও ব্যাটারি কেনার জন্য সুপার মার্কেটে ছুটে যাচ্ছেন।
নিউইয়র্ক সিটির পাতাল ট্রেন ও বাস বন্ধ রাখা হয়েছে রোববার সন্ধ্যা ৭টা (বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর ৫টা) থেকে। নিউ ইয়র্কের মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ এক নির্বাহী আদেশে জানিয়েছেন, পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত বাস ও পাতাল ট্রেন বন্ধ থাকবে।
মেয়রের নির্দেশে নিউ ইয়র্কের নিচু এলাকাগুলো থেকে ইতোমধ্যে পৌনে ৪ লাখ লোককে সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। নিউ ইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া ও আটলান্টিক সিটির কয়েক হাজার বাংলাদেশিও ইতোমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।
নিউ ইয়র্ক শহরের কয়েকটি এলাকায় ৭৬টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
শহরবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, “যদি আপনারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে না যান, তাহলে আপনারা কেবল নিজেদের জীবনই ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না, যারা আপনাকে নিরাপদে নিয়ে আসার জন্য গেছে, তাদের জীবনও শঙ্কার মধ্যে ফেলা হবে।”
এদিকে আগামী ৬ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও স্যান্ডি বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা এবং রিপাবলিকান দলের প্রার্থী মিট রমনি দুজনেই প্রচারণার ধরন পাল্টে ফেলেছেন। ভোটাররাও নজর রাখছেন- হারিকেন উপদ্রুত অঞ্চলে কে কেমন ভূমিকা রাখেন তা দেখতে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/জেকে/১৬০৩ ঘ.
0 comments:
Post a Comment