কাছে যাওয়ার পর তাঁদের কান্নাটা যেন আরও বাড়ল। এজাজুল ইসলাম বলেন, ‘সেই ভোর ছয়টা থেকে স্যারের জন্য অপেক্ষা করছি।’ এত আগে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আর তো কখনো স্যারের জন্য অপেক্ষা করার সুযোগ পাব না। স্যার আমাদের আর সে সুযোগটা দিলেন না। আজকে না হয় একটু অপেক্ষাই করলাম।’
এজাজুল ইসলামের পাশে নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম কিছুক্ষণ পর পরই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন।
সময় বাড়তে থাকে। কাড়তে থাকে লোকজনও। বাড়তে থাকে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে আসা সাংবাদিকের ভিড়। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দরে পায়ে হেঁটে এসেছেন ঈদিউল আলম নামের এক তরুণ। তার বুকে-পিঠে ব্যানার লেখা—প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের নামে সড়ক চাই।
সাড়ে সাতটার একটু পর মাইক্রোবাসে করে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান হুমায়ুন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীব, তাঁর স্ত্রী এবং দুই বোন শেপু ও শেখুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। ছিলেন হুমায়ুন আহমেদের বেশ কয়েকটি নাটকের সহকারী পরিচালক জুয়েল রানা। সবাই তাঁদের প্রিয় মানুষ, প্রিয় লেখক, প্রিয় স্যার ও প্রিয় ভাইটির জন্য অপেক্ষা করছেন। আটটার পর এসে পৌঁছান হুমায়ূন আহমেদের আরেক ভাই দেশবরেণ্য লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হক। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের তিন সন্তান নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ নুহাশসহ আরও কয়েকজন। পুরো বিমানবন্দরের পরিবেশ ভারী ও বিষণ্ন হয়ে উঠতে থাকে।
এর মধ্যে গণমাধ্যমের সব সাংবাদিকের নিয়ে যাওয়া হয় ভিভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে একেবারে রানওয়ে বরাবর। রানওয়ে যাওয়ার আগে ভিভিআইপি টার্মিনাল কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হয় আহসান হাবীবের সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বনানী কবরস্থান বা মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হুমায়ুন আহমেদকে সমাহিত করা হবে।
আটটা ৪০ মিনিটে হুমায়ুন আহমেদের মরদেহ রানওয়ে স্পর্শ করার কথা থাকলেও ১৪ মিনিট দেরির কারণে আটটা ৫৪ মিনিটে বাংলার শ্যামল মাটি স্পর্শ করে জননন্দিত লেখক হুমায়ুন আহমেদকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের বিমানটি। রানওয়েতে তখন হুমায়ুন আহমেদের পরিবারের আত্মীয়-স্বজন, রাজনৈতিক কর্মী, অভিনয়শিল্পী, নাট্য পরিচালক ও বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা জড়ো হয়েছেন। অবশেষে নয়টা ৫ মিনিটে হুমায়ুন আহমেদের মরদেহবাহী কফিনটি নামানো হয়। কফিনটি দেখামাত্র হুমায়ূনের সন্তান নোভা, শীলা, নুহাশ ও বোনসহ পরিবারের অন্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর পর আনুষ্ঠানিকতা শেষে হুমায়ুন আহমেদের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment