ইতিহাস ও প্রযুক্তির বিবেচনায় এই রহস্যময় যন্ত্রটি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার চেয়েও মূল্যবান। গবেষকেরা ধারণা করছেন, প্রাচীন এই কম্পিউটারটির রহস্যভেদ করতে পারলে প্রযুক্তির প্রাচীন অনেক ইতিহাস জানা সম্ভব হবে।
কম্পিউটারের সাহায্যে ছবি বিশ্লেষণ করে অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজম বিষয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। ডিভাইসটির বিভিন্ন পাশ থেকে তোলা তিন হাজার এক্স-রে ছবি বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি ডিভাইসটির একটি ডিজিটাল সংস্করণ দাঁড় করিয়েছেন তাঁরা।
এ প্রসঙ্গে গবেষক মাইক এডমান্ডস জানিয়েছেন, যন্ত্রটি ছিল অসাধারণ, কারণ এ ধরনের কেবল একটি যন্ত্রেরই সন্ধান মিলেছে।
প্রাচীন গ্রিসের লোকেরা গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতি তীক্ষ নজর রেখে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করত। অর্থাত্, তারা জ্যোতির্বিদ্যা চর্চায় অনেক দূর এগিয়েছিল। গ্রহ-নক্ষত্রের আবর্তনের সূক্ষ্ম হিসাব রাখতে তারা অ্যান্টিকিথেরা মেকানিজম নামের এ যন্ত্রটি ব্যবহার করতেন। তবে যন্ত্রটির উদ্ভাবক কে বা কারা সে তথ্য এখনো উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
গ্রিসের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল অ্যান্টিকিথেরা দ্বীপের কাছে সাগরে ডুবে থাকা হাজার বছরের পুরোনো রোমান জাহাজ থেকে ১৯০১ সালে এটি উদ্ধার করা হয়েছিল। উদ্ধারের পর প্রায় কয়েক দশক এর ব্যবহার সম্পর্কে গবেষকেরা কোনো কিছু নিশ্চিতভাবে বলতে পারছিলেন না। ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ডেরেক প্রাইস একে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়ের যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বর্তমানে অ্যান্টিকিথেরার ডিজিটাল মডেলটি তৈরির সময় গবেষকেরা মোট ২৭টি গিয়ার ব্যবহার করেছেন, তবে মূল ডিভাইসটিতে ৫০-৬০টি গিয়ার ছিল বলেই ধারণা করছেন তাঁরা। যন্ত্রটির মধ্যে ব্যবহূত ছোট ছোট যন্ত্রাংশ আর এর জটিল কাজের জন্যই এটি বিখ্যাত। একটি ‘এল’ আকৃতির হাতলের সাহায্যে একটি তারিখ নির্দিষ্ট করা হলে যন্ত্রটি সঙ্গে সঙ্গে ওই তারিখের গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয় করতে পারত। এই মেশিনের ছিল তিনটি ডায়াল, এই ডায়ালগুলোর সাহায্যে যথাক্রমে ৩৬৫ দিনের ক্যালেন্ডার, ২৩৫ মাসের মেটোনিক সার্কেল ও সারোস সার্কেলে গ্রহের অবস্থান জানা যেত। যা বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হয়। ঘড়ির কার্যক্রমের সঙ্গেও এর মিল রয়েছে। তাই একে পৃথিবীর প্রাচীনতম কম্পিউটার বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
p
0 comments:
Post a Comment