যাঁদের কথা বলা হচ্ছে তাঁরা একদল তরুণ চাকরিপ্রার্থী। ঘরে অভাব-অনটনের সঙ্গে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটও রোজকার সঙ্গী। এই প্রতিকূলতা জয় করে নিজের ভাগ্য গড়তেই রেলস্টেশনে এসে বাতির নিচে বসে পড়াশোনা চলছে তাঁদের। নিয়মিত এই অধ্যবসায় সাফল্যও এনে দিচ্ছে।
এখানকার পড়ুয়াদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছেন।
এমন একজন সফল তরুণ সরোজ কুমার (২৩)। গত দুই বছর তিনি নিয়মিত এসেছেন এই স্টেশনে। সবার সঙ্গে বসে পড়াশোনা করে চাকরির জন্য দেওয়া পরীক্ষায় উতরে গেছেন। একসঙ্গে দুটি চাকরি পেয়েছেন তিনি। একটি রেলের কর্মকর্তা পদে, অন্যটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে। তাঁর পছন্দ রেলের চাকরি। বিহারের এক ট্রাকচালকের ছেলে সরোজ এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিলেন সাসারাম রেলস্টেশনকে। সরোজ জানান, তাঁর ভাই সন্তোষ কুমারও নিয়মিত স্টেশনে এসে সবার সঙ্গে পড়াশোনা করতেন। গত বছর তিনিও রেলে চাকরি পেয়েছেন।
শুধু সরোজ নন, প্রতিদিন তাঁর মতো শত শত চাকরিপ্রার্থী যুবক জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রাতে জড়ো হন এই স্টেশনে।
৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্টেশনের এই পড়ুয়াদের দলে রোজ ভিড়ে যেতেন করণ কুমার। এর সুফলও পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি রেলে চাকরি হয়েছে তাঁর। তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে পড়েছি আর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। এটা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে সহায়তা করেছে।’ তিনি জানান, চাকরি পাওয়ার পরও প্রতিদিন তিনি এই স্টেশনে আসেন।
রাহুল কুমার নামের একজন বলেন, ‘আমরা সবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রশ্নপত্র ফটোকপি করি। তারপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। এখানে পড়ে যাঁরা সাফল্য পেয়েছেন, এমন অনেকেই মাঝেমধ্যে এখানে আসেন, নানা পরামর্শ দেন।’
নিরঞ্জন কুমার শ্রীবাস্ত নামের আরেকজন জানান, আমাদের কাছে এখানে আসা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। শহরে, সারা দেশে মাত্র তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। এখানে এলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। সবাই মিলে একসঙ্গে পড়াশোনা করা যায়।’
ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মতো বিহারেও বিদ্যুৎ-সংকট তীব্র। পাটনাভিত্তিক অর্থনীতিবিদ নওয়াল কিশোরী চৌধুরী বলেন, ‘রাজ্যটি চলছেই জেনারেটরের ওপর।’ বিবিসি।
0 comments:
Post a Comment