• দুর্দান্ত একটি এশিয়া কাপ খেলল বাংলাদেশ। দলটির এই হঠাৎ পরিবর্তনের নেপথ্য কারণ কী কী?
সাকিব আল হাসান: গত দুই-আড়াই বছর ধরে আমরা বিশ্বাস করি, পৃথিবীর যেকোনো ক্রিকেট দলকেই হারানোর ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু আমরা জয়টা নিয়মিত পাচ্ছিলাম না। কোনো না কোনো জায়গায় ছন্দ পতন হচ্ছিল। একটি পরিপূর্ণ দল হিসেবে বাংলাদেশ খেলতে পারছিল না। মাত্র তিন-চারজন খেলোয়াড় ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছিল, কিন্তু বাকিরা পারছিল না। এশিয়া কাপ দলে যে পরিবর্তনটা এসেছে তা হলো খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা। আপনারা দেখবেন, এই দলে সাত-আটজন খেলোয়াড় কেউ ব্যাট হাতে কেউবা আবার বল হাতে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেছে। আমি মনে করি, এই ধারাবাহিকতাই এশিয়া কাপে বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের নেপথ্য কারণ।
• বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স আপনার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ঘিরে আবর্তিত। এটা অবশ্যই একটা চাপ। এই চাপ আপনি কীভাবে সামলান?
সাকিব: দেখুন প্রতিবার আমি যখন মাঠে খেলতে নামি, আমার মাথায় চিন্তা থাকে দল তাতে উপকৃত হচ্ছে কি না। এটা অবশ্যই আমার জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। ভালো করার সুযোগ আমার কাছে আসে বিভিন্ন পরিস্থিতি, ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে। আমি কখনোই এই ভেবে ভয়ে কুঁকড়ে যাই না যে ‘যদি আমি ভালো করতে না পারি, তাহলে দলের কী হবে।’ আমি মানি যে বাংলাদেশ দল আমার পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গোটা দল কেবল আমার ওপরই নির্ভর করে থাকুক, এই ব্যাপারটি আমি পছন্দ করি না। খুশির ব্যাপার হচ্ছে, এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলে পারফর্মার বেড়েছে। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ধারাবাহিক হয়েছে। আশা করি, ধারাবাহিকতার এ ব্যাপারটি আমরা কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে রাখতে পারব। আমি গত ছয় বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছি। এই সময়ে আমি খেলাটার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জেনেছি। প্রচুর অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। কাউন্টি ক্রিকেটে খেলেও নিজেকে ঝালিয়েছি। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছি—এ সবই আমাকে একজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
• ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ অলরাউন্ডার হিসেবে আবার ফিরলেন—আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
সাকিব: এটা দারুণ একটা ব্যাপার। কারণ, এর আগে কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারের এ অর্জন নেই। আমি এই স্বীকৃতিতে দারুণ গর্ববোধ করি আবার এই স্বীকৃতি আমার মধ্যে আরও অধিক পরিশ্রমের তাগিদ সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যে স্বীকৃতিই গর্বিত করুক, ওপরে তুলে ধরুক, আমার কাছে তা অসামান্যই।
• বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব হারানোটা কি আপনার জন্য শাপে-বর হয়েছে?
সাকিব: ওভাবে বলতে পারেন। অধিনায়কত্ব হারানোর পর আমি নিজেকে নিয়ে বেশি ভাবতে পারি। আমার ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার অধিক চেষ্টা করতে পারি। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) একটা বড় ভূমিকা আছে। আমরা বিপিএলের সময় অনেক নামীদামি ক্রিকেটারের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করেছি। তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি। জাতীয় দলের জন্য ওসবের মধ্য থেকে যা উপকারী ও কার্যকর এশিয়া কাপে সেটাই প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছি।
• আইপিএলে এবার দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে নামবেন। আপনার দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের সম্ভাবনা এবার কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?
সাকিব: গত আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স দারুণ খেলেছিল। আমরা সেমিতে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছিলাম। আমি মনে করি, সেমিফাইনালে ওঠাটা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বড় ধরনের মাইল ফলক ছিল। এবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের লক্ষ্য ফাইনালে খেলা ও আইপিএলের শিরোপা জেতা। গত বছর আমাদের কিছু বাজে ভুল আমাদের চূড়ান্ত সাফল্য এনে দেয়নি। এবার আশা করছি, আমরা সেই ভুলগুলো শুধরে এবং ভালো খেলব।
• আইপিএলে দলগুলো খেলোয়াড় ধরে রাখা শুরু করেছে। আপনার কি মনে হয়, খেলোয়াড় ধরে রাখার সময় ও পরিধি আরও বাড়ানো উচিত?
সাকিব: অবশ্যই খেলোয়াড় ধরে রাখার ব্যাপারটি খুব ভালো হয়েছে। আমার তো মনে হয়, খেলোয়াড় ধরে রাখার পরিধি ও সময়—দুই-ই বাড়ানো উচিত।
• কলকাতা নাইট রাইডার্সের সবচেয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আইপিএলের কোন দল?
সাকিব: চেন্নাই সুপার কিংস—কোনো সন্দেহ নেই। আমার কাছে এই দলটি সব সময়ই খুব ব্যালেন্সড। মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বের কোনো তুলনা হয় না। তিনি খুব ঠান্ডা মাথার অধিনায়ক। সব সময়ই মাথা ঠান্ডা রেখে সেখানে বিভিন্ন পরিকল্পনা সাজিয়ে রাখেন। বিভিন্ন পরিস্থিতির বিভিন্ন পরিকল্পনা তাঁর মাথায় প্রস্তুত অবস্থায় থাকে সব সময়ই।
• কলকাতা নাইট রাইডার্সে আপনি জ্যাক ক্যালিস ও গৌতম গম্ভীরের মতো দুই খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলছে। ব্যাপারটি আপনাকে কতটুকু উপকার এনে দিয়েছে?
• সাকিব: এটা আমার জন্য বিরাট সম্মানের ব্যাপার যে ক্যালিস ও গম্ভীরের মতো দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে আমি ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করেছি। দুজন কিন্তু খেলার ধরন হিসেবে ভিন্ন খেলোয়াড়। কিন্তু তার পরও তাঁদের লক্ষ্য কিন্তু এক দলের জয়। বাংলাদেশ দলে প্রয়োগ করা অনেক কিছুই আমার তাঁদের কাছ থেকে নেওয়া। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment