এ জন্য প্রয়োজন পরস্পরকে জানা ও বোঝা। আমরা ভারত সম্পর্কে যতটা জানি, যত খোঁজখবর রাখি, ভারত কি বাংলাদেশ সম্পর্কে ততটা জানে? আমরা ভারতের বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি—সব টেলিভিশন চ্যানেলই দেখি, ওরা কি আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো দেখে? আমরা ওদের লেখকদের বই পড়ি, ওরা কি আমাদের লেখকদের নাম জানে? ওদের ক্রিকেট, চলচ্চিত্র, সংগীতের নাড়িনক্ষত্র আমাদের নখদর্পণে, কিন্তু ওরা কি জানে সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ সম্ভারে বাংলাদেশ ঋদ্ধ?
জানা ও জানানোর কাজটা হয় না বলেই বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব নিয়ে যত কথা হয়, তা থেকে ততটা ফল আসে না। দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক জানাশোনার মধ্য দিয়েই কেবল দুই দেশের মধ্যে কার্যকর বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে, যা থেকে লাভবান হবে দুই দেশই। আমরা বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্পের শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলোর আলো ছড়িয়ে দিতে চাই ভারতের মানুষের মধ্যে, তেমনি সীমান্তে হত্যা, টিপাইমুখ বা তিস্তা নিয়ে আমাদের বক্তব্যও তুলে ধরতে চাই ভারতবাসীর সামনে।
দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আদান-প্রদান বাড়ানো প্রয়োজন। গড়ে তোলা প্রয়োজন মানুষে মানুষে যোগাযোগের সেতুবন্ধ। মানুষে মানুষে মৈত্রীবন্ধন রচিত হলে দৃঢ় ও টেকসই হয় রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক। তার সুফল আসে উভয় দেশের মানুষের জীবনে। আমরা সব সময়ই বন্ধুত্বের দরজা অবারিত রেখেছি। এবার ভারতও খুলে দিক বন্ধুত্বের দরজা।
আমরা জানি, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত অনেক সমস্যা আছে; অনিষ্পন্ন সমস্যাগুলো নিয়ে রয়েছে টানাপোড়েন। ভারতের পরিকল্পিত টিপাইমুখ প্রকল্প, অভিন্ন নদী তিস্তার পানি ভাগাভাগি, ছিটমহল বিনিময়, সীমান্তে প্রাণহানিসহ বিদ্যমান সব সমস্যার ন্যায্য সমাধান আমরা চাই। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও বাণিজ্যিক বিনিময়ের পথ আরও উন্মুক্ত ও সুগম করতে আমরা চাই অবাধ যাতায়াতের সুযোগ আর সহজতর ও ঝামেলামুক্ত ভিসাব্যবস্থা। দুই দেশের মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আমাদের ন্যায়ভিত্তিক অবস্থান ও বক্তব্য আমরা সমগ্র ভারতবাসীকে জানাতে চাই।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নানা অনিষ্পন্ন সমস্যার চেয়ে বড় ও ইতিহাস-নির্ধারিত বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ ও ভারতের অভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে গভীর ঐক্যের সূত্র। মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো এবং ভারতের স্বনামধন্য দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া (বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারসংখ্যার ইংরেজি দৈনিক) শুরু করছে এক সমান্তরাল কর্মসূচি—মৈত্রীবন্ধন: এগিয়ে চলো।
এর আগে পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ সংবাদপত্র প্রকাশনা গোষ্ঠী জং গ্রুপ অব পাবলিকেশনসের (এই গোষ্ঠীর উর্দু দৈনিক জং, ইংরেজি প্রভাতি ট্যাবলয়েড দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল ও সন্ধ্যাকালীন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি নিউজ) সঙ্গেও ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া ‘আমান কি আশা’ (শান্তির আশা) নামের একটি সমান্তরাল কর্মসূচি সুসম্পন্ন করেছে। সে কর্মসূচি দুই দেশের নাগরিক সমাজ, শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, সংস্কৃতিজগতের মানুষ, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে এবং সরকার ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কর্মসম্পাদনে, তাদের আচার-আচরণের ওপর সংবাদমাধ্যমের প্রভাব অনস্বীকার্য। সাম্প্রতিক একটি দৃষ্টান্ত: সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর বিএসএফের সদস্যদের নিপীড়নের খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকার দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। দুই দেশের অবাধ তথ্যপ্রবাহ বাড়ানো মৈত্রীবন্ধন কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য, প্রচারমাধ্যম ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী ও সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়াস চলবে সমান্তরালভাবে।
১৮ ফেব্রুয়ারি টাইমস অব ইন্ডিয়া মৈত্রীবন্ধন কর্মসূচি শুরু করেছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে একাধিক নিবন্ধ ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে কয়েক দিন। এই উদ্যোগ ভারতের নাগরিক সমাজে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। ২৩ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলকাতা, মুম্বাই ও নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের মিলিত অংশগ্রহণে বড় আকারের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। আমরা বাংলাদেশেও একই ধরনের কর্মসূচির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। প্রিয় পাঠক, আমরা আপনার সঙ্গ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
0 comments:
Post a Comment