এবারের সূচকে সবচেয়ে কম স্কোর পেয়ে দুর্নীতির শীর্ষে অর্থা ৎ তালিকায় নিম্ন ক্রমানুসারে এক নম্বরে রয়েছে যৌথভাবে সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়াকে এই প্রথম টিআই জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সূচকে এবার সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। গত বছর ছিল যৌথভাবে সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০১১ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ও স্কোরে কিঞ্চি ৎ অগ্রগতি হলেও এতে সন্তুষ্টির সুযোগ নেই। স্কোর ৩-এর নিচে থাকায় (১০-এর মধ্যে) বাংলাদেশ দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা থেকে বের হতে পারেনি।
জার্মানির বার্লিন থেকে কেন্দ্রীয়-ভাবে টিআই ‘দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০১১’ (করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স-সিপিআই) প্রকাশ করে। আর ঢাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এটি প্রকাশ করা হয়। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অংশটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় টিআইবির সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রযোজ্য তথ্যের সময়সীমা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগসহ ২০১১ সালের দুর্নীতিসংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহের প্রতিফলন এই সূচকে ঘটেনি। তা ছাড়া এবার জরিপে নতুন পাঁচটি দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সূচকের ক্ষেত্রে এর কোনো প্রভাব আছে কি না, তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে।’ তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশই শতভাগ স্কোর পায়নি, যা আবারও প্রমাণ করল, দুর্নীতি একটি বিশ্বজনীন চ্যালেঞ্জ এবং এটি শুধু উন্নয়নশীল দেশের একক সমস্যা নয়।
সারা বিশ্বের দেশগুলোর দুর্নীতির পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবছর এ ধারণাসূচক প্রকাশ করে টিআই। সংস্থাটির দাবি, এ সূচক প্রামাণ্য কোনো বিষয় না হলেও এতে দুর্নীতির বিস্তারের একটি ধারণা পাওয়া যায়। এ সূচক অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ২.০ স্কোর পেয়ে নিম্নক্রম অনুসারে তৃতীয়, ২০০৭ সালে ২.০ স্কোর পেয়ে সপ্তম, ২০০৮ সালে ২.১ স্কোর পেয়ে দশম, ২০০৯ সালে ২.৪ স্কোর পেয়ে ত্রয়োদশ অবস্থানে ছিল। ২০১০ সালে দ্বাদশে গিয়ে এবার আবার ত্রয়োদশ অবস্থানে ফিরে আসে বাংলাদেশ।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা চাই, পরিস্থিতির এই কিছুটা উন্নতিকে বাংলাদেশ সরকার প্রণোদনা হিসেবে নেবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের স্কোর এখনো ৫-এর নিচে রয়েছে।’
টিআই দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০১১ অনুযায়ী, সূচকের ০-১০-এর স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২.৭, যা গত বছরের তুলনায় ০.৩ বেশি। তালিকার উচ্চক্রম অনুযায়ী, ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০। নিম্নক্রম অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। এবার বাংলাদেশের সমান স্কোর পেয়ে একই অবস্থানে রয়েছে আরও আটটি দেশ। এগুলো হলো: ইকুয়েডর, ইথিওপিয়া, গুয়াতেমালা, ইরান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া, মোজাম্বিক এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জ।
গত বছর ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। বাংলাদেশের স্কোর ৩-এর নিচে থাকায় এবারও বাংলাদেশ দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকা থেকে বের হতে পারেনি।
১০-এর মধ্যে ৯.৫ স্কোর পেয়ে এবার কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় স্থানে যৌথভাবে ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্ক (স্কোর ৯.৪) এবং তৃতীয় স্থানে সুইডেন (স্কোর ৯.৩)। আর ৯.২ স্কোর পেয়ে সিঙ্গাপুর পঞ্চম স্থানে রয়েছে। গত বছর ৯.৩ স্কোর পেয়ে সিঙ্গাপুর যুগপ ৎ ভাবে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ছিল।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা: সূচক অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। এবার দেশটির স্কোর ৫.৭ এবং ১৮৩টি দেশের মধ্যে ভুটানের অবস্থান ৩৮ (ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী)। শ্রীলঙ্কার স্কোর ৩.৩ এবং অবস্থান ৮৬। ভারতের অবস্থান ৯৫, স্কোর ৩.১। ভারতের পরের অবস্থান বাংলাদেশের। এর পরে পাকিস্তানের ও মালদ্বীপের স্কোর ২.৫ এবং অবস্থান ১৩৪। এরপর নেপাল অবস্থান করছে ১৬৪ নম্বরে, ২.২ স্কোর পেয়ে। তালিকার দ্বিতীয় সর্বনিম্নে অবস্থানকারী আফগানিস্তানের স্কোর ১.৫ এবং অবস্থান ১৮০।
দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) নিরূপণ পদ্ধতি: গতকালের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিপিআই নির্ণয়ে টিআইবি কোনো ভূমিকা পালন করে না। এমনকি টিআইবির গবেষণা থেকে প্রাপ্ত কোনো তথ্য বা বিশ্লেষণ সিপিআইয়ে পাঠানো বা বিবেচনা করা হয় না।
সিপিআই অনুযায়ী, দুর্নীতির সংজ্ঞা হচ্ছে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ‘সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার’। যেসব জরিপের তথ্যের ওপর নির্ভর করে সূচকটি নিরূপিত হয়, তার প্রশ্নমালায় সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের ব্যাপকতার ধারণারই অনুসন্ধান করা হয়। বিশেষ করে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ দেওয়া-নেওয়া, সরকারি ক্রয়-বিক্রয়ে প্রভাব খাটিয়ে মুনাফা অর্জন, সরকারি সম্পত্তি আত্মসা ৎ ইত্যাদি গুরুত্ব পায়।
সিপিআই ২০১১ সালে ১৩টি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত ১৭টি জরিপের ওপর নির্ভর করে সূচক তৈরি করা হয়েছে। জরিপগুলোতে মূলত ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সংশ্লিষ্ট দেশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাসরত দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের ধারণার প্রতিফলন ঘটে থাকে।
তথ্যসূত্র: সিপিআই ২০১১-এর জন্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তথ্যসূত্র হিসেবে নয়টি জরিপ ব্যবহার করেছে। সেগুলো হলো: এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কান্ট্রি পারফরম্যান্স অ্যাসেসমেন্ট রেটিং, বার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের পরিচালিত বার্টেলসমান সাসেটইনেবল গভর্নেন্স ইনডিকেটর, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট পরিচালিত কান্ট্রি রিস্ক সার্ভিস অ্যান্ড কান্ট্রি ফোরকাস্ট, আইএইচএস গ্লোবাল ইনসাইটের গ্লোবাল রিস্ক সার্ভিস, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রকল্পের রুল অব ল ইনডেক্স, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিসেস রিপোর্ট, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১০ ও একই প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভিসেস ২০১১। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment