আমি: “জি বলেন” ,
লোকটি: “ভিতরে আসবো?”
”আসেন”।
এই কম্পিউটারটি আমার বোন সঙ্গীতা আপনার কাছে পাঠাইছে, কি নাকি প্রবলেম আছে , আমি অতসব বুছি না, আপনি দেখেন। যার নাম বলল তাকে আমি চিনি। আমি পিসি টি অন করে দেখতে লাগলাম কি সমস্যা। দেখলাম উইন্ডুজ ৭ ইনস্টল করা, অনেক অনেক সমস্যা কোন প্রোগামই রান হয়না। হার্ডডিস্ক ফরমেট দিয়ে সকল প্রোগাম সেটআপ দেয়া আমার পক্ষে এরকম একটি সুন্দর প্রাকৃতিক লগ্নে সম্ভব না্ । এমনিতে মেজাজ চরমে স্বপ্ন ভঙ্গের কারণে। আমি সমাধানের সহজ রাস্তা খুজে বেড় করলাম উইন্ডুস রিষ্টোর করা্ । শুরু করে দিলাম উইন্ডুস রিষ্টোর করা্। লোকটি শুরু করে দিল তার মহান অলৌকিক কথা বার্তা। তার কথা শুনে আমি হাড়িয়ে গেলাম অলৌকিক জগতে, যে জগতের সন্ধান আমরা কেউ জানি না। ......
অলৌকিক লোকটি কথা বলা শুরু করে দিয়েছে, তার চোক চক চক করছে, খুব তৃপ্তি সহকারে সে বলে যাচ্ছে, বুঝলেন ভাই ও কম্পিউটারের কিছুই পাড়ে না। অজথাই টাকা খরচ করে কিনেছে। সে তার বোনের কথা বলছে। “সঙ্গীতা কি আপনার আপন বোন?” সে একটু বিমর্ষ হয়ে বলল, না আমার ফুফাতো বোন। ওকে আর আমার ফুফুকে দেখে রাখার জন্য আমি ওদের বাসায় থাকি। বোন ও মানসিক রোগী, ফুফু ও মানসিক রোগী। আমি না থাকলে ওরা সব এতদিনে পাগল হয়ে যেত। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন এই পাগল গোলানরে দেখে রাখার জন্য আমারে এখানে পাঠিয়ে দিছে। বোঝলেন না এটা আমার একটা ডিউটি।”
আমি বল্লাম ও আচ্ছা । মহান লোকটি আবার বলা শুরু করে দিলে, “বুঝলেন ওরা সবাই মিথ্যা কথা বলে, ৯৯% মিথ্যা আর ১% সত্য কতা বলে । আমি ই হলাম একমাত্র ব্যক্তি যে ১০০% সত্য কতা বলি। তার চোখে মুখে হাসির ঝিলিক।
আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না, ভদ্রতার খাতিরে বললাম তারপর, আর কি খবর?
লোকটি আরমোরা দিয়ে নরেচরে বসে বলল, আপনি কি ভাবছেন আপনার সামনে স্বারণ এক লোক বসে কথা বলছে? আপনি তো বুঝতে পারেন নাইেআমি তো একজন আল্লাহর অলী।”
এখন আমি একটু নরেচরে বসলাম, আমার সামনে একজন মহান আল্লাহর অলী বসে আছেন, বেয়াদপের মতো বসে থাকা কি আর চলে? এতক্ষনে আমার পিসি রিষ্টোর শেষ। ইচ্ছে করলে তাকে বিদেয় করে দিতে পারতাম। কিন্তু তা করলাম না। এই মহান অলীর সাথে কথোপকথরে একটু খায়েস হইল। তার সাথে অলৌকিক আলাপ জুড়ে দিলাম।
কি বললেন আপনি আল্লাহর অলী ?
হে... , কেন আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না? আরে আমি শুধু অলী না, অলী আওলীয়াদের অনেক অনেক উর্ধে আমি। আপনি তো জানেন না আমি নবীত্ব লাভ করেছি।
-নবীত্ব লাভ করেছেন মানে?
লোকটি আরো উৎফুল্ল হয়ে যাহা বলা শুরু করিলেন, তাহার মহান অলৌকিক কথা শুনিয়া দেহ মোর ঘামসিক্ত হয়ে গেল তুষারময় মেঘলা দিনেও।
“মানে বুঝরে না, কি করে বুঝবেন সব বুঝ আল্লাহ সবারে দেয়নি। তাইলে শুনেন আল্লাহর নবী আমারে স্বাক্ষাৎ দিয়া বলে গেছেন আমি নবীত্ব লাভ করেছি। দুনিয়ার সমস্ত লোকের দায় দায়িত্ব এখন আমার।”
আমি বললাম, আল্লাহর নবী মানে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)?
লোকটি হাসি হাসি ভয়ার্ত মাখা দৃষ্টিতে বলল জ্বি, তাইলে আপনাকে কি বলছি? আপনি তো জানেন না আমি নবীর বংশদর।
আমাকে ও আরো অলৌকিক তৃষ্ণায় পেয়ে বসল। খেয়াল হলো এই নবীত্ব লাভ করা ব্যক্তির নাম তো জানা হলো না। জিজ্ঞাসিলাম কি নাম আপনার?
” আমার নাম হযরত শাহজালাল (রঃ) বাবার নামে নাম। আমাকে সবাই জালাল পীর ভাই বলে।
আমার বয়স কম তো তাই সবাই পীর বাবা না বলে পীর ভাই বলে।
-তা মহান অলী ওরফে পীর ভাই আপনার তো দেখছি দাড়ি, গোঁফ কিছুই নেই, আপনি এত বড় অলীত্ব কিভাবে লাভ করলেন। আমি একটু বিস্মিত হলেই জিজ্ঞাসা করলাম।
”আপনি কি তাহলে আমাকে বিশ্বাস করছেন না? সে বিরক্ত মুখে কিছুটা রাগ নিয়ে বলল।
“আমাকে যদি কেউ ফালতু বলে, অবিশ্বাস করে তবে তার ক্ষতি হয়ে যাবে।
মহান নবীত্ব লাভ কারী অলী ওরফে পীর ভাই এর কথা শুনে, কলিজায় পানি নাই,। আমি পাঁপি তাপি মানুষ এ মহান অলীর লীলা খেলা বুঝিবার সাধ্য এ অধমের নাই।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, কি বলেন অবিশ্বাস করব কেন, আপনাকে দেখেই বুঝা যায় আপকা চেহারায় নুর বি চমকাতে হায়।
” তিনি আবার বলা শুরু করলেন, আমার কাছে শুধু নবী ই আসেননি আরো কে কে এসেছেন জানেন?
জ্বি বলেন আর কে কে এসেছেন?
”স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামিন এসে আমার সাথে দেখা করেছেন।
সোবহান আল্লাহ, সত্যি তিনি মস্ত বড় অলী। যেখানে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ও কখনো দাবি করতে পারেননি যে মহান আল্লাহ তায়ালা তার সাথে এসে স্বাক্ষাত করেন, আর এই পীড় ভাই বলছেন আল্লাহ তার সাথে এসে দেখা করে গেছেন। বড় আমার সারা শরীর কাঁপছে। ইনি কি মানুষ না ফেরেশতা, দেবদূত বুঝে উঠবার পাড়ছিনা। আমার কন্ঠ রোদ্ধ হয়ে আসছে। চারিদিকে কিরকম যেন একটা অন্ধকার, না আলো না আধার বুঝিতে পারছিনা। তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে ভয় ও লাগছে আবার মস্ত বড় অলীর কাছ থেকে অনেক কিছু জানিবার লোভ ও সামলাতে পারছিনা। এহেন ভয়-কৌতুহল মিশ্রিত কন্ঠে তাকে আবার প্রশ্ন করিলাম--
-আল্লাহকে আপিনি কি রকম দেখলেন।
”আনন্দপূর্ণ চকচকে হাসিতে পূর্ণ নয়ন যুগল নুরের জ্যোতি বিচ্ছুরিত করিয়া তিনি বলিলেন। আহহা কি বর্ণনা দিব ভাই সেই রূপের সত্যি অপরূপ দেখতে কিযে নূরানী তার চেহারা একখান।
-আপনি আল্লাহকে নুরাণী চেহারায় দেখলেন তাহলে? আল্লাহ কি তাহলে মানুষ? ভযে ভয়ে তাকে প্রশ্ন করিলাম।
” হু, আল্লাহ তো মানুষই, অতী মনোহর নুরানী চেহারার মানুষ সে। আপনি দেখলে বেহুষ হয়ে যাইতেন।
তার এহেন পীড়ানী উত্তরে, আমার কৌতুহল আরো তেজদীপ্ত হয়ে উঠিল। আমি মনো ও যোগের সহিত শ্রবনাকৃষ্ট হইলাম।
তিনি বহমান নদীর মতো বলিয়া চলিলেন.........
” আল্লাহ আমার সাথে প্রায় দেখা করতে আসেন, আমরা অনেকক্ষন বসে বিভিন্ন আলাপ-সালাপ করি। শুধু আল্লাহ না আমার সাথে সমস্থ ফেরেস্তা(জিবরাইল ফেরেস্তা, আজরাইল, মিকাইল, মুনকার নাকিব) সবাই দেখা করে গেছে। আল্লাহ আমাকে বলে গেছেন আমার নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাৎ সব মাফ। কিছুই করা লাগবে না। কারণ তোমার সাথে তো আমার দেখা হয়েই গেছে, তুমি তো আমাকে পাইছই। আর যারা আমার স্বাক্ষাৎ পায়নি তারা সেন নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে...। তবে আল্লাহ আমাকে মানুষকে খুশে করার জন্য ও মানুষের মন রক্ষার জন্য আমাকে নামাজ পড়তে বলছে। তবে এখন না যখন আমি সুস্থ হবো তখন।
-তার মানে মানে আপনি কি এখন অসুস্থ?
হু আমার শরীরের নিচের অংশটা অসুস্থ। তাইতো এখন আমি কিছু করতে পারিছিনা। যেমন আপনি অনেক সমস্যায় আছেন, ধরেন কারো টাকা পান কিন্তু সে দেয় না, আপনি আমাকে এখন জানায় রাখলেন, আমি যখন সুস্থ হইব তখন আপনার টেকা আমি ফিরায় আইনা দিতে পারমু।
-আপনি তো তাহলে অনেক কিছু পারবেন।
”আরে হ তাইলে আর আপনাকে আমি মিথ্যা কথা বলছি?! আপনি জানিন আমার দেশের বাড়িতে চারশকোটী টাকা পইরা রইছে, আমি অসুস্থ তাই টাকার মায়া ছাইরা এখানে পইরা রইছি। কারণ আল্লাহ আমারে এখানে ডিউটি দিয়া রাখছে।
”একবার জায়গা জমি নিয়া কতগুলা শয়তান মানুষের সাথে মামলা চলছিল, এতে বিরোধী পক্ষের অনেক উকিল মোক্তার থাকার পরও কোন উকিল ছাড়াই জজ সাহেব আমার পক্ষে রায় দিয়েছে। আরে আমি হইলাম নবীত্ব লাভ করা অলী, আমার পক্ষে রায না হয়ে পারে! স্বয়ং আল্লাহ রাসুল এবং সকল ফেরেস্তা আমার উকিল আছিল।
-আপনার দেশের বাড়িতে চারশ কোটী কাকা পড়ে আছে? আপনার দেশের বাড়ি কোথায়? আমার ভয়ার্ত প্রশ্ন।
” আপনি মুক্তা গাছার নাম মুনছেন? আমি বললাম, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছ?
” লোকটি বলা শুরু করে দিল, শুধু চারশ কোটী টাকাই না, মুক্তাগাছার অর্ধেকের ও বেশী সম্পত্তি আমার।
আমাকে আপনি এখন যা দেখছেন আমি তো এরকম থাকুমনা, সুস্থ হবার পর আমি তো দুনিয়ার বাদশা হয়ে যামু।
এই যে বাংলাদেশ এবং সারা পৃথিবীর মানুষ কত সমস্যায় আছে, আমি দুনিয়ার বাদশা হবার পর সবার সমস্যা দূর হইয়া যাইব। ”
- মহান অলীর এহেন কথার কোন জবাব খুজে পেলাম না। নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে হলো, এত বড় একজন মহান লোক আমার সামনে বসে আছেন। মনে মনে ভাবছি আমার কত সমস্যা, বলে শেষ করার মতো না। ইনি দুনিয়ার বাদশা হলে আমার আর কোন সমস্যা থাকবে না। একটু পর চোখ মেলে দেখি লোকটি ধীরে ধীরে ছায়া ছায়া আছায়া অন্ধকারে মিলিযে গেল। আমার শরীরে ঘাম দিয়ে জ্বড় ছাড়ল। আমি অপেক্ষায় রইলাম কবে এই মহান ব্যক্তি দুনিয়ার বাদশা হয়ে আমাকে দর্শন দিবে।
বিঃ দ্রঃ লেখাটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। আমার নিকট লোকটির ঠিকানা, ছবি এর্ং তার কথার কিছু অংশের (যেটুকু রেকর্ড করা গেছে) একটি অডিও টেপ ও আছে। সঙ্গত কারেণে তা প্রকাশ করা হলো না।
আকাশনীল ০১/১২/২০১২, মুন্সীগঞ্জ।
0 comments:
Post a Comment