কৃতজ্ঞতার সুফল

কোনো আলাপচারিতা কিংবা আড্ডায় প্রায়ই আমরা আক্ষেপ করে থাকি, ‘নাহ! ভালো কাজের আজকাল কোনো দাম নেই! কারো উপকার করে লাভ কী? সে আমার কী এমন উপকার করেছে?’ অথচ সমান্য কৃতজ্ঞতাবোধ থাকলে এসব বাক্য নিমেষেই পাল্টে যেত। কিন্তু কাউকে ধন্যবাদ কিংবা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভালো কিছুর দৃষ্টান্ত তৈরি করতে আমরা নারাজ। কারণ এসবে চটজলদি কোনো ফল পাওয়া যায় না। ফলে শুধু কৃতজ্ঞতাবোধ কেন, গভীর কোনো বোধই আজকাল আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে বসেছে। আর কারণে-অকারণে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত অভ্যাসের দাস হয়ে উঠেছি ক্রমেই।

কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটা কৃতজ্ঞতাবোধ কেবল সামাজিক আচারের অংশ নয়, এ বোধটুকু স্বাস্থ্যের জন্যও দারুণ উপকারী। কৃতজ্ঞতা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী? এটা শুনতে অবান্তর লাগলেও এ বিষয়ে গবেষণা করে গবেষকরা জানিয়েছেন, আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন, কৃতজ্ঞতাবোধ শারীরিক-মানসিকভাবে দেহের উপকার করে। আর এর উপযোগিতা প্রমাণ করতে তাঁরা কতগুলো দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন মজার মজার প্রবাদবাক্য আবৃত্তি করলে মস্তিষ্ক জটিল ভাবনা থেকে মুক্ত থাকে এবং তার ক্রিয়াকর্মকে আরো সক্রিয় করে তোলে। কৃতজ্ঞতাবোধসম্পন্ন মানুষ কখনোই বোকাসোকা কিংবা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে না।
গবেষকরা আরো উল্লেখ করেছেন, এমনকি কেউ যদি কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ১৫ মিনিটের একটি চিঠিও লেখে, তবে তার মানসিক ও শারীরিক উন্নতি সাধিত হয়। তাঁরা জানান, হতে পারে পরিবার, বন্ধু, কিংবা সহকর্মী, মোটকথা মানুষের যেখানে সামাজিক সম্পৃক্ততা রয়েছে সেখানেই কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার সুযোগ রয়েছে। গবেষকরা অবশ্য কৃতজ্ঞতা জানানোর পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কাউকে কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে কাছে গিয়ে জানানোই সবচেয়ে ভালো। যদিও অনেকেই দূর থেকে মানসিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে কিছুটা অপূর্ণতা থেকে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. পি মুরালি দোরাইস্বামী বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা যদি কোনো ওষুধ হতো তবে তা আমি শ্রেষ্ঠ পণ্য হিসেবে বাজারজাত করতাম। কৃতজ্ঞতার একটা বিশেষ আবেশ আছে, যা দেহের ওপর প্রভাব ফেলে।’ এ বিষয়ে কেন্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সালেম নামের অন্য এক গবেষক জানান, কৃতজ্ঞতাবোধ বড় ধরনের শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন ঘটায়।

সূত্র : ডেইলি মেইল অনলাইন।

কালের কন্ঠ