পৃথিবীটাকে রন দেখেছেন অবশ্য একটু ভিন্নভাবে। ওপর থেকে তোলা অনেকগুলো দেশ দেখালেন রন। সঙ্গে বর্ণনা দিলেন পৃথিবীজুড়ে থাকা নানা সমস্যার কথা। মিলনায়তনভর্তি মানুষ পিনপতন নীরবতায় তাঁর কথা শুনলেন।
তবে রন গারান আসল চমকটি দিলেন শেষ মুহূর্তে। স্পেসশিপের যে জানালা দিয়ে সারা বিশ্ব দেখেছেন, দেখা গেল সেখানে একটা বই রাখা। বইটার নাম ক্রিয়েটিং এ ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি। সে বইটিই উপহার দিলেন তিনি বইটির লেখক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে।
বইটিতে রন গারান লিখলেন: ‘এই ভঙ্গুর পৃথিবীর মানুষের জন্য আপনি যা করেছেন, সে জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। এ বইটি আমার সঙ্গে স্পেস স্টেশন মিশনে ভ্রমণ করেছে। বইটি পৃথিবীর কক্ষপথে দুই হাজার ৬২৪ বার পরিভ্রমণ করেছে। ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৫০০ মাইল বেগে বইটি গেছে ছয় কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ মাইল।’ এরপর রন সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রচেষ্টায় নিজের সমর্থন জানালেন।
রন গারান ছিলেন তৃতীয় সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনের গণবক্তৃতা পর্বের অন্যতম বক্তা। প্রথম দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভিয়েনা সময় রাত আটটায় (বাংলাদেশ সময় রাত একটা) কংগ্রেস সেন্টারে এ পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়। রন ছাড়াও বক্তা ছিলেন জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অ্যাডভোকেট, ইউএনটিআইডির প্রধান ফিলিপ ডউসে-ব্লেজি এবং অধ্যাপক ইউনূস। এ পর্বটি ছিল উন্মুক্ত। ভিয়েনার অনেকেই এসেছিলেন কথা শুনতে।
শুরুতেই ফিলিপ ডউসে-ব্লেজি এইডস-পরিস্থিতির বর্ণনা দেন। সতর্ক করেন সবাইকে। একই সঙ্গে তিনি দারিদ্র্য দূর করা এবং এমডিজি পূরণ নিয়ে কথা বলেন। এর পরই বক্তব্য দেন রন গারান।
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। সামাজিক ব্যবসার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় ধরনের সামাজিক ব্যবসা করা সম্ভব। তিনি বলেন, গল্পের আলাদিনের সেই দৈত্য এখন সবার হাতের মধ্যে। আলাদিনের প্রদীপের দৈত্য আসত হাতের স্পর্শে। এখনকার দৈত্যও আসে হাতের স্পর্শে। এখনকার দৈত্যের নাম ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ফোন।
ড. ইউনূস বলেন, মোবাইল ফোনকে শুধু অর্থ আয়ের উপকরণ না ভেবে এর মাধ্যমে অনেক সমস্যা সমাধানের কথা ভাবতে হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে একজন গর্ভবতী মা জানতে পারবেন, তাঁর সন্তান জন্ম দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে কি না।
চার দিনের এ সম্মেলনে মূল পর্ব দুই দিনের। গতকাল শুক্রবার ছিল সম্মেলনের মূল পর্বের দ্বিতীয় দিন। দিনের শুরুতে এরই মধ্যে সামাজিক ব্যবসায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন কোম্পানি তাদের সাফল্য ও প্রকল্পের বর্ণনা দেয়। কোম্পানিগুলো হলো: ইন্টেল, ভিওলিয়া, মাম্মু, ভিলেজ বুম, বিএএসএফ, গুড বি এবং গ্রামীণ ক্রিয়েটিভ ক্লাব। এই পর্বে হলিউড তারকা হিউ জ্যাকম্যান একটি ভিডিওবার্তার মাধ্যমে সম্মেলনের সাফল্য কামনা করেন।
ড. ইউনূস এরপর জানান কীভাবে এই হলিউড তারকা তাঁকে খুঁজে বের করে তাঁর কাজের সঙ্গী হতে চেয়েছেন। হিউ জ্যাকম্যানের বাবা বিশ্বব্যাংকে কাজ করতেন। তিনিই পড়তে দিয়েছিলেন ড. ইউনূসের বই ব্যাংকার্স টু দ্য পুওর। সেই বই পড়ে হিউ জ্যাকম্যান অনুসারী হন অধ্যাপক ইউনূসের।
দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুটি প্যানেল আলোচনা। যেমন: সামাজিক ব্যবসা ও বিশ্বায়ন এবং সামাজিক ব্যবসার জন্য সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক কাঠামো। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment