একইভাবে ‘ডিজ্যাবেল চিলড্রেন হোম’ ও ‘বাংলাদেশ কাউন্সিল ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার’ নামের দুটি এনজিও নয় বছর ধরে নিবন্ধন নবায়ন করছে না। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘সমাজ উন্নয়ন প্রচেষ্টা’ নামের আরেকটি এনজিও গত ২১ বছরেও নিবন্ধন নবায়ন করেনি।
ব্যুরোর সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে টাকা আসে এমন এনজিওগুলোকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর অবশ্যই নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে। কিন্তু ব্যুরোর অধীন বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট অন্তত ৬৫০ এনজিও নিবন্ধন নবায়ন না করেই অবৈধভাবে চলছে। এর মধ্যে ৩০০টি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নবায়ন না করে চলছে।
ব্যুরোর কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধন নবায়ন না করায় এনজিওগুলো আদৌ চলছে কি না, কিংবা কীভাবে চলছে—তা জানা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া বিদেশ থেকে টাকা এনে কোন খাতে খরচ করছে, সে সম্পর্কেও সরকার কিছুই জানতে পারছে না।
এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক নূরুন নবী তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধন নবায়ন না করায় গত বছর কয়েক শ এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। নিবন্ধন শেষ হওয়া এনজিওগুলোকে এবারও নবায়ন করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে নবায়নের আবেদন না করলে নিয়ম অনুযায়ী এসব এনজিওর নিবন্ধনও বাতিল করা হবে।
এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিওর সংখ্যা দুই হাজার ৮২টি। এগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, নিবন্ধন নবায়ন করা হয়নি এমন এনজিওর সংখ্যা ৬২৭টি।
ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫৩৮টি এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ সালেই বাতিল করা হয়েছে ৫২৬টির নিবন্ধন। যথাসময়ে নিবন্ধন নবায়ন না করার কারণেই এগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
এনজিওগুলো কেন নিবন্ধন নবায়ন করে না—জানতে চাইলে ব্যুরোর পরিচালক (প্রকল্প) সুবীর কিশোর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অনেক এনজিও অনুদান বা প্রকল্পের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। অনেকগুলো বিদেশ থেকে টাকাও পায় না। তাই ১০ বা ১৫ হাজার টাকা খরচ করে তারা নিবন্ধন করতে আসে না। আবার কারও হয়তো অসৎ উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।
ব্যুরোর সূত্র জানায়, নিবন্ধন বা নবায়ন ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এমন কিছু এনজিও অবৈধভাবে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে বিভিন্ন কাজে ব্যয় করছে বলে অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অতীতে এনজিও ব্যুরোকে বিষয়টি একাধিকবার জানানো হয়েছে। কাজেই এনজিওগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনার জন্য নবায়ন অপরিহার্য।
তবে ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশের (এফএনবি) পরিচালক তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ব্যুরো কোনো এনজিওর নিবন্ধন দেওয়ার কর্তৃপক্ষ নয়। তাদের কাজ অর্থ ছাড় করা। সেই কারণেই ব্যুরোতে নিবন্ধন করতে হয়। আসলে এনজিওগুলোর সমাজসেবা বা মহিলা অধিদপ্তর কিংবা অন্য কোথাও নিবন্ধন করা থাকে।
ব্যুরোতে নিবন্ধন করলে সমস্যা কী—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যুরোতে নিবন্ধন করার জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার সরকারি খরচ আছে। ছোটখাটো এনজিওগুলোর জন্য এই টাকা দেওয়া একটি সমস্যা। আর মূলত বিদেশি অনুদানের জন্য এদের নিবন্ধন নিতে হয়। প্রকল্প না থাকলে বা বিদেশ থেকে টাকা না এলে ব্যুরোর নিবন্ধনের দরকার মনে করেন না অনেকেই।
0 comments:
Post a Comment