কৃষকের রোদে পোড়া দেহের ঘামঝরা কষ্ট একসময় চাগিয়ে তোলে খিদে। কিন্তু বাড়ি গিয়ে খেয়ে আসার ফুরসত কোথায়? তবে তাঁর বধূটি ঠিকই জানে কখন একফাঁকে স্বামীকে খাইয়ে আসতে হবে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মাধবপুর গ্রামে এমন এক বধূর দেখা মেলে। সাধনা রানী নামের এই গাঁয়ের বধূ স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে খেতের দূরত্ব এক কিলোমিটার তো হবেই।
মাথায় খাবারের পোঁটলা নিয়ে খেতের আইল ধরে যাচ্ছিলেন সাধনা। হাতে পানিভরা জগ। আলাপ করার চেষ্টা করতেই সাধনা মৃদু হেসে বললেন, ‘ধানের খেতত স্বামীর জন্যি খাবার নিয়ে যাচ্ছি। হামার তাড়া আছে। কথা বলতি হলে মাঠে চলো।’
চপল পায়ে এগিয়ে চলা বধূটির সঙ্গে খেতে গিয়ে দেখা গেল, ধান কাটায় ব্যস্ত একদল কৃষক। সাধনার সাড়া পেয়ে কাজ ফেলে উঠে এলেন স্বামী সুসেন্দ্র নাথ। খেতেই একচিলতে ফাঁকা জায়গায় বসে গেলেন তিনি। স্বামীর জন্য সযত্নে খাবার সাজালেন সাধনা। হাপুস-হুপুস করে খেতে লাগলেন স্বামী। শিগগিরই আবার কাস্তে চালাতে হবে।
সুসেন্দ্র নাথ জানান, ১৯৮৬ সালে বিয়ে করেছেন তাঁরা। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার। খেতে মজুরি খেটে জীবিকা চালাতে হয়। ধান কাটার মৌসুমে সময় বাঁচাতে বাড়ি যাওয়া হয় না। তখন তাঁর স্ত্রী রোজ এভাবে খেতে এসে তাঁকে খাইয়ে যান।
সাধনা রানী বলেন, এভাবে প্রতিদিন স্বামীকে খাইয়ে তৃপ্তি পান তিনি। তাঁকে যে না খেয়ে খাটতে হচ্ছে না—এতেই সাধনার সুখ।
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রবীণ শিক্ষানুরাগী মনতোষ কুমার দে বলছিলেন, মাঠে কাজ করা স্বামীর জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে খাবার বয়ে আনা এই অঞ্চলে কর্ম-সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এই অঞ্চলের মেয়েরা শুধু ঘরের কাজ করে না, কাজের মৌসুমে মাঠের কাজেও হাত বাড়িয়ে দেয়। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment