বেকায়দায় পড়া শিয়ালটির পক্ষে ‘কেক-কেক-কা-হু’ শব্দ ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তীব্র কষ্ট ও প্রাণভয়ে কাঁপছিল প্রাণীটি।
ক্রমেই মানুষের জটলা বাড়ছিল। তাদের কেউ কেউ বলল, শিয়ালের মাংস খেলে বাতের ব্যথাসহ অনেক রোগ সেরে যায়। শিয়ালের তেলেরও নাকি অনেক গুণ। কাজেই এটিকে তারা জবাই করে খাবে। একটি বিপক্ষও দাঁড়িয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। তারা নগদ প্রাপ্তির পক্ষে। শিয়ালটিকে পাকড়াও করে কবিরাজের কাছে বিক্রি করতে চাইল তারা। কামাল লোকজনকে শিয়ালটিকে না মারতে বলেছে, তবে তার কাথায় কেউ কর্ণপাত করেনি। অগত্যা ফোন করেছে আমাকে, কী করা যায় জানতে।
আমি ওকে বললাম, লোজনকে আমার উদ্ধৃতি দিয়ে বলুক, ‘এসব কুসংস্কার। শিয়ালের মাংস বা তেলে এমন কোনো গুণই নেই, যাতে বাতের ব্যথা কমে। এভাবে না বুঝে মারতে থাকলে একদিন হয়তো এরা হারিয়ে যাবে। তখন প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারাবে।’ কেন জানি না, আমার কথায় শিয়াল শিকার করতে আসা লোকেরা বিশ্বাস করেছিল। তারা শিয়াল নিধনে নিবৃত্ত হলো তো বটেই, এমনকি অংশ নিল উদ্ধারকাজে। কামালের সঙ্গে তাদের কজন মিলে কাদা থেকে প্রাণীটিকে সাবধানে তুলে আনে। শিয়ালটির মুখ-পেট-পা কাদা দিয়ে মেখে একাকার। গা থেকে ভালোভাবে কাদা পরিষ্কার করে আবার ফোন করে আমাকে।
বলল, ‘যা অবস্থা, তাতে বাঁচবে কি না, সন্দেহ। শিয়ালটি নড়তে পারছে না, মরার মতো পড়ে আছে এবং কাঁপছে।’ আসলে দীর্ঘক্ষণ কাদাপানিতে থাকায় এবং ভয়ে ও কিছুটা মার খেয়ে ওর এই অবস্থা। ওর শরীরটা একটু গরম করে কিছু খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে বললাম। তা ছাড়া কিছু ওষুধের কথাও বলে দিলাম। এরপর আমিও খানিক বাদে বাদে খোঁজ নিচ্ছিলাম। কামাল ওকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে পরামর্শমতো সেবাশুশ্রূষা করে। ওরা আগুন জ্বেলে এর ওমে শিয়ালটির গা গরম করার ব্যবস্থা করে। গায়ে চট জড়িয়ে দেয়। শিয়ালটি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠে। ২০ নভেম্বর ক্যাম্পাসে এনে আমরা সবাই মিলে খুবই আনন্দ-উৎসাহে শিয়ালটিকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দিই। মনের আনন্দে বনে চলে গেল শিয়াল পণ্ডিত। কিছুদিন আগে লোকের পিটুনিতে আহত একটি বাগডাশকে চেষ্টা করেও বাঁচাতে না পারার যে দুঃখ ছিল আমাদের, এই শিয়ালটিকে প্রাণে বাঁচাতে পেরে তা কিছুটা হলেও দূর হলো। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment