ইরান বারবার বলে আসছে তারা পরমাণু কর্মসূচি বিদ্যুত্ উত্পাদন ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করবে না। কে শোনে কার কথা।
ইরানকে এ কর্মসূচি থেকে সরানোর উপায় কী? দুটো পন্থা বা উপায় রয়েছে। একটি হলো—নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, যা গত ৩০ বছর ধরে চলে আসছে। দ্বিতীয়টি হলো যুদ্ধ।
অন্যদিকে, এ অবস্থায় ইরানের করণীয় কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ থেকে বের হয়ে আসার মোক্ষম অস্ত্র হলো—তেল এবং তেল পরিবহনের পথ। এ পরিবহন পথের নাম হরমুজ প্রণালি। বিশ্ববাজারের শতকরা ৪০ ভাগ তেলের বাণিজ্য হয় এ পথ দিয়ে।
ইরানের তেলমন্ত্রী রুস্তম কাজেমি আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তেলকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের বাধ্য করা হয়, তাহলে এ তেল আমরা যেকোনোভাবেই হোক ব্যবহার করব।’
তবে ইরানের তেল উত্পাদনের প্রধান হিসেবে যাকে ধরা হয় সেই বেন ল্যান্ডো বলেছেন, ‘তেলের উত্পাদন কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন কাজেমি। যাতে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য বেড়ে যায়।’
বেন ল্যান্ডো আরও বলেন, ‘ইরান যদি ধীরগতিতে তেল উত্পাদন করে, তবে এর সুফল ভোগ করবে তেল উত্পাদকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের অন্য দেশগুলো। আর ইরান যদি তা করে, তবে আমি মনে করি তাদের অনেক বড় ক্ষতি হবে।’
ইরানের পার্লামেন্ট সদস্য মেহদি মেহদিজাদে বলেছেন, ‘কাজেমি তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা কৌশল হিসেবে আমাদের বিবেচনায় আছে।’
ইরানের পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিলে তেলের মূল্য বেড়ে যাবে। এতে পশ্চিমা অর্থনীতিও সংকটে পড়বে।’
মধ্যপ্রাচ্যের তেলের বাজার বিশ্লেষক কেট ডৌরিন বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহের পথ। কুয়েত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ইরাক, কাতারসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ তেল বাণিজ্যের জন্য এ পথের ওপরই নির্ভরশীল।’
কেট ডৌরিন আরও বলেন, ‘হরমুজ প্রণালি ছাড়া তেল বাণিজ্যের জন্য অন্য কোনো পথ ইরানের নেই। তাই এ পথ বন্ধ করা ইরানের নিজের নাক কাটার মতোই হবে।’
তবে সৌদি আরব লোহিত সাগর এবং সুয়েজ খাল দিয়ে কিছু তেলের বাণিজ্য করতে পারে। আরব আমিরাত তেল বাণিজ্যের জন্য বাইপাস পাইপলাইন তৈরি করেছে।
তবে ইরান হরমুজ প্রণালিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে না বলেই মনে করে কেট ডৌরিন। এ হুমকি কাজে লাগাতে ইরান হরমুজ প্রণালিকে কীভাবে ব্যবহার করে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
0 comments:
Post a Comment