এখন চোখভরা অশ্রু আর মনভরা আশঙ্কা নিয়ে কাটছে তাঁর দিন।
পাঁচ সন্তানের মুখে খাবার ও বাড়িভাড়ার অর্থ জোগাতে এখন একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন হালিমা। মাস শেষে যে অর্থ পান, মার্কিন মুদ্রায় তা ২৫০ ডলার। এই অর্থে কোনোমতে দিন গুজরান করছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
ইরাকে এমন নারী রয়েছেন প্রায় ২০ লাখ, যাঁদের উপার্জনে সংসার চলছে। হালিমা তাঁদেরই একজন। এর মধ্যে বেশির ভাগ নারীই হালিমার মতো স্বামীহারা।
হালিমা যে বেতন পান, এর বেশির ভাগ অর্থ চলে যায় বাড়িভাড়ার পেছনে। বাকি টাকা মাস শেষ হওয়ার আগেই ফুঁ হয়ে যায়। এতে পরিবারের নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে হালিমাকে মূলত প্রতিবেশী ও দানশীল লোকজনের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়।
এই দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে হালিমা বলেন, ২০০৬ সালে যখন তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়, তখন তাঁদের ছোট সন্তান রিধা সবেমাত্র এক পা-দুই পা করে হাঁটতে শিখেছে। তিনি বলেন, এর পর থেকে তিনি সন্তানদের জন্য বাবা-মা উভয়ের ভূমিকাই পালন করে আসছেন।
বাড়িভাড়া শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হালিমা। তিনি বলেন, ‘বাড়িভাড়া আমাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
হালিমা জানান, জঙ্গিরা দিয়ালা প্রদেশে তাঁর স্বামীকে গলা কেটে হত্যা করেছে। ওই সময় তাঁর স্বামীর ভাই ও ভাতিজাকেও হত্যা করা হয়। তিনি জানান, একটি গাড়ি বিক্রি করতে ও আরেকটি গাড়ি কিনতে তাঁরা দিয়ালায় গিয়েছিলেন। একদল সুন্নি জঙ্গি শিয়া ভেবে তাঁর স্বামীকে হত্যা করে। আসলে তাঁর স্বামী সুন্নি।
স্বামীর মৃত্যুর পর বাগদাদের উত্তরাঞ্চলের সুন্নি-অধ্যুষিত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে সদর সিটিতে আশ্রয় নেন শিয়া হালিমা। এ সময় তাঁর কাছে কোনো অর্থ বা বিক্রি করার মতো কোনো জিনিস ছিল না।
ইরাকের মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইবতিহাল গাসিদ আল-জাইদির তথ্যমতে, দেশের প্রায় ২০ লাখ নারী পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম সদস্য। এসব নারীর মধ্যে অধিকাংশের স্বামী ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানের পর যুদ্ধ ও জাতিগত সংঘাতে মারা গেছেন।
ত্রাণ সংস্থা রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইরাকে প্রায় ১৫ লাখ স্বামীহারা নারী রয়েছেন, যা দেশের মোট নারীর প্রায় ১০ শতাংশ। দ্য ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস বলেছে, ইরাকে এক লাখের বেশি নারী সংসার চালান।
মন্ত্রী জাইদি বলেন, ইরাকের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী। তিনি বলেন, ‘এসব কঠিন পরিস্থিতিতে নারীদের দুর্ভোগ অনেক বেশি। কারণ, এ ক্ষেত্রে তিনিই বাবা, তিনিই মা, তিনিই সেবাদানকারী এবং তিনিই উপার্জনকারী।’ জাইদি বলেন, ‘বাড়ির ভেতর ও বাইরে তিনি বিশাল দায়িত্ব নিচ্ছেন।’ রয়টার্স।
0 comments:
Post a Comment