বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা তারবার্তায় দেখা যায়, ত্রিপোলিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিন এ. ক্রেজ লিবিয়ার সাবেক এই নেতাকে ‘প্রাণবন্ত ও খামখেয়ালি’ বলে উল্লেখ করেন। তারবার্তায় গাদ্দাফির বেশ কিছু মজার কাজেরও উল্লেখ ছিল।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ২০০৯ সালে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন গাদ্দাফি। ওই অধিবেশনে ভাষণে তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে ‘সন্ত্রাসী পরিষদ’ বলে আখ্যা দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দাবি করেন তিনি।
২০০৯ সালের মার্চে আরব দেশগুলোর এক সম্মেলনে সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা হয় গাদ্দাফির। এ সময় গাদ্দাফি সৌদি বাদশাহকে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য আপনাকে তৈরি করেছে এবং রক্ষা করছে। তাই আপনি সব সময় তোয়াজ করে চলেন।’ এরপর নিজেই নিজের প্রশংসা করা শুরু করলেন, ‘আমি আরব নেতাদের নেতা, আফ্রিকার রাজাদের রাজা এবং মুসলিম বিশ্বের ইমাম (নেতা)।’
নিউইয়র্কে ওই অধিবেশনে যোগ দিতে মার্কিন ভিসার আবেদনের সঙ্গে ছবি চাইলে প্রথমে ছবি দিতে চাননি গাদ্দাফি। তাঁর ঘনিষ্ঠ একজন জানান, ছবি চাইলে তিনি ত্রিপোলির বিভিন্ন স্থানের বিলবোর্ডে থাকা তাঁর ছবি থেকে ছবি তৈরি করে নেওয়ার পরামর্শ দেন। মার্কিন দপ্তর ওই ছবি নিতে অস্বীকার করে। পরে ওই ঘনিষ্ঠজন তাঁকে বুঝিয়ে ছবি দিতে রাজি করান।
কর্নেল গাদ্দাফির অন্যতম শখ ছিল ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সোনার ঘড়ি উপহার দেওয়া। ওই ঘড়ির বিশেষত্ব ছিল, এর ডায়ালে সামরিক পোশাক পরা গাদ্দাফির ছবি থাকত। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইসকেও লকেটসহ এমন একটি ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন গাদ্দাফি। নিজেকে তরুণ ও তেজস্বী লাগে—এমন ছবিই এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেন তিনি।
কর্নেল গাদ্দাফির উচ্চতা-ভীতি ছিল। তাই রাতে থাকার জন্য দ্বিতীয় তলার শয়নকক্ষই ছিল তাঁর প্রথম পছন্দ। আরেকটি বিষয় সব সময় মেনে চলতেন—কখনো ৩৫ ধাপের ওপরে উঠতেন না তিনি। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে গাদ্দাফির জন্য নিউইয়র্কে দ্বিতীয় তলায় কোনো শয়নকক্ষ পাওয়া যায়নি। তাই নিউ জার্সিতে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
টানা আট ঘণ্টার বেশি ভ্রমণ করতে চাইতেন না গাদ্দাফি। টানা দীর্ঘ ভ্রমণ এড়াতে গাদ্দাফি ২০০৯ সালে নিউইয়র্কে যেতে পর্তুগালে যাত্রাবিরতি করেন। জলপথে ভ্রমণে তাঁর কেমন যেন ভীতি ছিল। বিষয়গুলো নিয়ে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
গাদ্দাফি সবকিছুর ব্যাপারে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করতেন। তাঁদেরই একজন ইউক্রেনিয়ান নার্স গ্যালিনা কোলোতনেস্কা। গাদ্দাফির সঙ্গে গ্যালিনার সম্পর্ক এতই ঘনিষ্ঠ ছিল যে, অনেক দূতাবাস মনে করে, তাঁদের মধ্যে ‘আবেগঘন সম্পর্ক’ ছিল। চারজন সুন্দরী ইউক্রেনিয়ান নার্স গাদ্দাফিকে সব সময় ঘিরে রাখতেন।
গাদ্দাফি নিজের জন্য একটি নারী নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করেছিলেন। এই বাহিনীকে লিবিয়ায় ‘দ্য রেভল্যুশনারি নান্স’ বা ‘দ্য গ্রিন নান্স’ বলা হতো। আল-জাজিরা, এএফপি।
প্রথম আলো ডেস্ক
0 comments:
Post a Comment