খুলনা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের দৌলতপুর কেন্দ্রে ফটকের সামনেই কয়েকটি মালটার গাছ। সম্প্রতি এই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে ফিকে হলুদ রঙের অসংখ্য মালটা। কেন্দ্রের কার্যালয়ের সামনেও রয়েছে বেশ কয়েকটি গাছ। ফল ধরছে সেগুলোতেও।
খুলনায় মালটা চাষের সফল প্রবর্তন করছেন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রশান্ত সরকার। নানা রকমের ফল নিয়ে তিনি অনেক দিন থেকেই কাজ করছেন। চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৯০ সালে, রাজশাহী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে। তিনি মূলত বিভিন্ন ফলের উন্নত জাত উদ্ভাবনের বিষয়ে গবেষণা করেছেন সেখানে। তিনি জানালেন, রাজশাহীতে বারি লিচু-১, বারি পেঁপে-১, বারি কুল-১ ও ২ উদ্ভাবন করেন। রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে আসেন সিলেটের জৈন্তাপুর কেন্দ্রে। এখানে তিনি লেবুজাতীয় ফল নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল কমলা-মালটা-সাতকরা, জাবালেবু প্রভৃতি। জৈন্তাপুর থাকার সময়ই তিনি সারা দেশে চাষের উপযোগী মালটার জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি খুলনার দৌলতপুর কেন্দ্রে যোগ দিয়ে ২০০৯ সালে দেশি-বিদেশি পাঁচ জাতের মালটার কলম লাগিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর প্রথম ‘বারি মালটা-১’ জাতের গাছে প্রচুর পরিমাণ ফল ধরেছে। একই কথা বললেন দৌলতপুর কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। বলেন, ‘আমাদের বারি মালটা-১ বাজারের অন্যান্য ফলের চেয়ে স্বাদে ও মিষ্টতায় অনেক ভালো। আকারেও অনেক বড়।’
প্রশান্ত সরকার বলেন, অনেক গবেষণা-প্রচেষ্টার ফলে পাহাড়ি অঞ্চলের বাইরে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল খুলনায় সফলভাবে মালটা উৎপন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত প্রধান মৌসুমি ফলগুলো উৎপন্ন হয়। কিন্তু সুস্বাদু বারি মালটা-১ পাকে আশ্বিন মাসে। বসতবাড়ি বা কৃষি খামারের একটু উঁচু জায়গায় এই মালটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যেতে পারে। এর ফলন ভালো। সে কারণে লাভজনক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। চাষাবাদের পদ্ধতিও সহজ বলে আমাদের কৃষকেরা অল্প খরচেই এই মালটা চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।’
0 comments:
Post a Comment