স্টিভ জবস
একজন উদ্ভাবকের মূল কৃতিত্বটা কোথায় জানেন? তিনি এমন কিছু আবিষ্কার করবেন, যা আগে কেউ দেখেনি। কিন্তু আবিষ্কারের পর তা পরিণত হবে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গে। টমাস আলভা এডিসন, ডেভিড সারনফ, বব নয়েচে ও গর্ডন মুর, লি লাকোকা কিংবা বিল গেটস থেকে শুরু করে সদ্যপ্রয়াত স্টিভ জবস। তাঁরা সবাই এমন কিছু উদ্ভাবন করেছেন, যা উদ্ভাবনের সময় মানুষের কাছে ছিল একেবারেই নতুন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওগুলো হয়ে গেছে মানুষের জীবনাচারের অংশ। অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর আরও কিছু মানুষের নাম সামনে চলে এসেছে, যাঁরাও প্রযুক্তির দুনিয়াকে নতুন পথ দেখিয়ে গেছেন। —নাইর ইকবাল
টমাস আলভা এডিসন
টমাস আলভা এডিসন
টমাস এডিসন বিজলি বাতি আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর এই আবিষ্কার বদলে দিয়েছিল প্রযুক্তিজগতের খোলনলচে। এটি কেবল একটি আবিষ্কার ছিল না, বরং বিজলি বাতি তৈরি করেছে অজস্র কালজয়ী প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ক্ষেত্র। আলোর ধারণা থেকে এই এডিসনই আবিষ্কার করেছিলেন ক্যামেরা, আলোকচিত্রের প্রযুক্তি। তিনি ফিল্ম উদ্ভাবন করেছেন; চলচ্চিত্রের মৌলিক ধারণাটা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। গ্রামোফোন রেকর্ড তৈরি করে সংগীতকে দিয়েছেন অন্য এক মাত্রা।
টমাস এডিসনকে শুধু একজন উদ্ভাবক বললে তাঁকে খাটো করা হয়। তিনি ছিলেন একজন বিপণনপটু ব্যক্তিত্ব। তিনি তাঁর উদ্ভাবিত জিনিসগুলোর বাজার তৈরি করেছেন পৃথিবীময়। তৈরি করেছেন এগুলোর চাহিদা। হালের স্টিভ জবস কিন্তু হেঁটেছিলেন টমাস এডিসনের দেখিয়ে দেওয়া পথেই।
ডেভিড সারনফ
ডেভিড সারনফ
ঘরে বসে বেতারে গান শোনার যন্ত্রটি বানিয়েছিলেন এই ডেভিড সারনফই। এর আগে নিজের তৈরি একটি বেতারযন্ত্র দিয়ে টাইটানিকের দুর্ঘটনার সংবাদ সবাইকে জানিয়েছিলেন সারনফ। তখন থেকেই তাঁর মাথায় ঘুরতে থাকে এমন কিছু তৈরি করার ব্যাপারটি, যা হবে গণযোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। পরিকল্পনামাফিক কাজ করে তিনি তৈরি করেন রেডিও মিউক বক্স। এটি ছিল তারবিহীন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ঘরে বসেই সংগীতপিপাসুরা উপভোগ করতে পারবেন সংগীতের অমিয় সুধা।
এখানেই থেমে যাননি সারনফ। একদিন উদ্ভাবন করে ফেললেন রঙিন টেলিভিশন-প্রযুক্তি। সারনফের হাতেই রঙিন হয়ে ওঠে এই জনপ্রিয় বিনোদনমাধ্যম। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজ সারা পৃথিবীতে যে রঙিন টেলিভিশন-প্রযুক্তি বর্তমান, তা আধুনিক এই যুগেও সারনফের উদ্ভাবিত মৌলিক ধারণাগুলোর ওপরই দাঁড়িয়ে আছে।
বব নয়েচে ও গর্ডন মুর
বব নয়েচে ও গর্ডন মুর
বব নয়েচে ও গর্ডন মুর তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন ক্ষুদ্র মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কার করে। এই দুই ভদ্রলোকের আবিষ্কার তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির ধারাকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে যায়। তাঁদের উদ্ভাবিত মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ছিল অতি ক্ষুদ্র এবং অধিক সক্ষমতার অধিকারী। তাঁদের হাতেই গড়ে ওঠে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইনটেল। তাঁরা তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়াকে যা উপহার দিয়েছিলেন, তা সত্যিকার অর্থেই খুলে দিয়েছিল অনেক আধুনিক উদ্ভাবনের দুয়ার।
এই দুই তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সব সময়ই চিন্তা করতেন কম জায়গা ব্যবহার করে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার চিপ তৈরি করার। দুজনই বিশ্বাস করতেন, প্রযুক্তিকে প্রতিনিয়ত বদলে দেওয়া সম্ভব। আর মানুষও এই বদলে যাওয়া প্রযুক্তি সব সময়ই সাদরে গ্রহণ করে। বর্তমান প্রযুক্তিদুনিয়ায় কিন্তু নয়েচে ও মুরের এই ভাবনা শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
লি লাকোকা
লি লাকোকা
স্টিভ জবস বোধহয় লি লাকোকার কাছ থেকেই কিছু আইডিয়া ধার করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন লাকোকার অনেক ভাবনাও। যেমন, এমন কোনো কিছুর উদ্ভাবন, যা মনুষ্যচিন্তাকে নাড়া দেবে তাঁর চেহারা দিয়ে। এমন কিছু তৈরি করা, যা দেখে মানুষ বলবে, ‘আরে, এই জিনিস তো আমি একদিন স্বপ্নে দেখেছিলাম!’
লি লাকোকার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি মানুষের হূৎস্পন্দন বুঝতে পারতেন। তিনি ভবিষ্যতের দিকেও চোখ রাখতে পারতেন। ফোর্ডের হয়ে তিনি ‘মুসটাং’ নামের যে মডেলের গাড়ির উদ্ভাবন করেছিলেন, সেটা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে খুব উঁচুমানের না হলেও তা ছিল তৎকালীন মার্কিন জনগণের কল্পনাশক্তির পরিপূর্ণ উন্মেষ।
বিল গেটস
বিল গেটস
বিল গেটস শূন্য থেকে কোনো কিছু শুরু করেননি। তিনি প্রচলিত প্রযুক্তিরই সর্বোত্তম ও সহজ ব্যবহার নিশ্চিত করেছিলেন। বিল গেটস উদ্ভাবিত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম পৃথিবীতে আসার আগে কম্পিউটার ব্যবহারবান্ধব ছিল বললে ভুল বলা হবে। কম্পিউটার ছিল এমন একটি প্রযুক্তি, যা কম্পিউটারবিদ্যায় শিক্ষিত মানুষ ছাড়া অন্য কারও পক্ষে ব্যবহার করা একটু কঠিনই ছিল। বিল গেটস কম্পিউটার-প্রযুক্তিকেই দিলেন অন্য মাত্রা। তিনি পুরো ব্যাপারটিই করে তুললেন সহজ ও স্বাভাবিক। এমন একটি জিনিস তিনি কম্পিউটারে সংযোজন করলেন, যা থেকে মানুষের পক্ষে খুব সহজে বেরিয়ে আসা সম্ভব হলো না। বিল গেটসের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি পরিণত হলো মানুষের মধুর এক অভ্যাসে। সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন --- প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment