আত্মজীবনী বের হওয়ার আগেই বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এ বইয়ের বিভিন্ন চুম্বক অংশ প্রকাশ করেছে। এতে উঠে এসেছে, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস সম্পর্কে স্টিভ জবসের ‘তেতো’ মনোভাব। এসেছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে পৃথিবী থেকে ‘সরিয়ে’ দেওয়ার ব্যাপারে জবসের অন্তিম আকাঙ্ক্ষার কথা।
তবে স্টিভ জবস ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে দারুণ পছন্দ করতেন। জাকারবার্গকে পছন্দ করার ব্যাখ্যাও আত্মজীবনী লেখক ওয়াল্টার আইজ্যাকসনকে এক সাক্ষাত্কারে দিয়েছিলেন জবস। তিনি বলেছিলেন, ‘জাকারবার্গকে আমার ভালো লাগে। কারণ, নিজের উদ্ভাবনকে সে অর্থের হাতছানির কাছে বিক্রি করে দেয়নি।’
আইজ্যাকসন জবসের পুরো আত্মজীবনীটি লিখেছেন তাঁর সঙ্গে ৪০টি সাক্ষাত্কারের ওপর ভিত্তি করে। এ সাক্ষাত্কারগুলোরই একটি গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে অডিও আকারে প্রচারিত হয়েছে। ওই সাক্ষাত্কারের একটি অংশে জবস জাকারবার্গ সম্পর্কে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছিলেন।
জবস জাকারবার্গকে অনেকটাই নিজের মতো মনে করতেন। নিজের মতো বলতে, তিনি জাকারবার্গের মধ্যে দেখতে পেতেন নিজের চিন্তা-ভাবনা ও আদর্শের প্রতিফলন। দুজনই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়া ছাত্র। দুজনই একেবারে তরুণ বয়সে নিজের উদ্ভাবনকে হাজির করেছিলেন বিশ্ববাসীর সামনে। দুজনই আত্মপ্রচারের গড্ডলিকায় নিজেদেরকে ভাসিয়ে না দিয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির উত্কর্ষতায় মনোযোগী হয়েছিলেন বা হয়েছেন। অর্থের পেছনে না ছুটে দুজনই নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন।
সাক্ষাত্কারে জাকারবার্গ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জবস টেনে এনেছিলেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ বিল গেটসকে। বিল গেটসকে অর্থলিপ্সু আখ্যা দিয়ে জবস বলেছিলেন, ‘বিলের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য বড়লোক হওয়া। সে তাঁর সেই উদ্দেশ্য পূরণও করেছে। আমি কখনোই অর্থের পেছনে ছুটে বেড়াইনি। আমি খুবই আশ্চর্য হব, যদি শুনি বিল এ ধরনেরই কোনো কথা বলছে।’
স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর তাঁর জায়গা কে নেবেন—এ নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা চলেছে। তবে জাকারবার্গ যে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রযুক্তির ‘রকস্টার’, সেটা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। অনেকেই জাকারবার্গের মধ্যে স্টিভ জবসের ছায়া দেখেন। ফেসবুকের যেকোনো অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে জাকারবার্গ আসেন অনেকটা স্টিভ জবসের স্টাইলে। অ্যাপলের যেকোনো পণ্য অবমুক্তকরণের সময় জবস যে ভঙ্গিমায় উপস্থিত সবার সঙ্গে কথা বলতেন—জাকারবার্গও তা-ই করেন। অনেকে বলেন, অ্যাপলের ম্যাকবুক দিয়েই নাকি ফেসবুকের উদ্ভাবনের কাজটি সেরেছিলেন জাকারবার্গ।
আত্মপ্রচারণার বিরুদ্ধে জবসের মতো জাকারবার্গও সোচ্চার। সম্প্রতি এমআইসি গ্যাজেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান জাকারবার্গের পুতুল (অ্যাকশন ফিগার) বিক্রি করা শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। ফেসবুক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ উদ্যোগ ঠেকানোর ব্যবস্থা করে। অ্যাপলও কয়েক বছর আগে জবসের পুতুল বিক্রির বিরুদ্ধে এমনই এক ব্যবস্থা নিয়েছিল।
জবস যেদিন মারা গেলেন, সেদিন জাকারবার্গ তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘স্টিভ, তুমি আমার পথপ্রদর্শক ছিলে। ছিলে বন্ধুও। তুমি দেখিয়ে দিয়ে গেছ, তুমি যা উদ্ভাবন করেছ, তা পৃথিবীকে বদলে দিতে পারে। সত্যিই তোমাকে আজ আমি বড্ড মিস করছি। হয়তো করব, বাকি জীবনটাও।’
স্টিভ জবস যদি এই স্ট্যাটাসটি দেখতে পেতেন!
0 comments:
Post a Comment