আরব বসন্তে তিউনিশিয়া ও মিসরে সরকার পরিবর্তনের ইতিহাস সবার জানা। সর্বশেষ সরকার পরিবর্তন হয়েছে লিবিয়ার। তবে লিবিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। গাদ্দাফির হাত থেকে লিবিয়ার বেসামরিক লোকদের রক্ষায় ডেভিড ক্যামেরন ও নিকোলা সারকোজির নেওয়া উদ্যোগে সমর্থন দিয়েছেন ওবামা। এরপর সেখানে শুরু হয় ন্যাটোর হামলা। সহিংসতা ও গাদ্দাফির নির্মম পরিণতির মধ্য দিয়ে লিবিয়ায় সরকার পরিবর্তন হয়েছে। অন্যথায় হয়তো সেখানে একটি গৃহযুদ্ধ বেধে যেত পারত এবং গাদ্দাফি টিকেও যেতে পারতেন।
গাদ্দাফির পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরশাসকদের মধ্যে এখন সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ। তিনি ও তাঁর বাবা মিলে দেশটির কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ হত্যা করেছেন। তাঁদেরকে এ জন্য অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
জাতিসংঘ ও পশ্চিমাদের আহ্বানকে উপেক্ষা করে সিরিয়ায় সরকারবিরোধীদের ওপর সহিংসতা অব্যাহত রেখেছেন কিছুটা উগ্র হয়ে ওঠা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। গাদ্দাফির শেষ ভরসা ছিল তাঁর প্রতি অনুগত উপজাতিরা, কিন্তু সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের সে ভরসাও নেই। তবে বিরোধীদের দমনে তাঁর এই অনমনীয় অবস্থানে পেছনে রয়েছে কয়েকটি বড় মিত্র রাষ্ট্রের সমর্থন।
ইরান অব্যাহতভাবে সিরিয়াকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রেসিডেন্ট বাশারের প্রতি তুরস্ক আহ্বান জানালেও তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সরকার পরিবর্তনে তাদের সমর্থন নেই। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো রাশিয়া ও চীন জাতিসংঘে আসাদকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এটাই তাঁকে দুর্বার করে তুলেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে সরকার পরিবর্তন, গণতন্ত্রে ফেরা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা—এসব বিষয়কে মস্কো ও বেইজিং মোটেও পছন্দ করছে না। এসবের নামে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা আগ্রাসনের ঘোর বিরোধী তারা।
সিরিয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমা জোট ও ন্যাটো যদি লিবিয়ায় কৌশল অবলম্বন করে, তা হলে আসাদ সরকারেও পতন হবে। আসাদ সরকারের পতনে ইরানও বেশ বেকায়দায় পড়বে।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক দেশ মরক্কো ও জর্ডানে বিদ্রোহের উপাদান হয়তো আছে, কিন্তু সেখানকার অধিকাংশ জনগণই রাজপরিবারের প্রতি যথেষ্ট অনুগত।
আরব বসন্তে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনার দিকে দিয়ে সৌদি আরবের অবস্থান ভিন্ন। সেখানকার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে রাজপরিবারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। সৌদি রাজপরিবার তাদের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য অভ্যন্তরীণ বাহিনীর ওপর আস্থা না রাখতে পারলেও শক্তিশালী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারে।
সৌদি রাজসিংহাসনের প্রথম উত্তরাধিকারী যুবরাজ সুলতান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ ২২ অক্টোবর নিউইয়র্কে মারা যান। এরপর সৌদি রাজসিংহাসনের নতুন উত্তরাধিকার হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ নায়েফ বিন আবদুল আজিজকে আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত করেছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ।
যুবরাজ নায়েফ কট্টরপন্থী বলেই পরিচিত। সময়ের স্পন্দন বোঝার মতো ক্ষমতা তাঁর নেই বললেই চলে। আরব বসন্তের জোয়ারে সৌদি রাজদণ্ডের হাল সামলাতে তিনি কতটা সক্ষম হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
0 comments:
Post a Comment