অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন জীবনাচরণ বা লাইফ স্টাইল বদলানো। গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয়ের প্রতি নজর দিলে বিনা ওষুধে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক পরিশ্রম করা, সুষম খাদ্য গ্রহণ, পাতে লবণ না খাওয়া, মদ না খাওয়া। যারা এ পাঁচটি কৌশল যথাযথ অনুসরণ করেও উচ্চ রক্তচাপ বাগে রাখতে পারবেন না তাদের অবশ্যই নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।আজ আমরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওজন কমানোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব। ওজন বাড়া, স্থূলকায় হওয়া কিংবা মেদভুঁড়ি থাকা উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে ওজন বাড়লে রক্তচাপ বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় গড়পড়তা ৫ কেজি ওজন কমাতে পারলে রক্তচাপ ২.৫ থেকে ১০ মি: মি: পারদ চাপ কমে যায়। যাদের ওজন অধিক এবং উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য ওজন কমানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা। অতিরিক্ত ওজন এবং মেদভুঁড়ির সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্যের সম্পর্ক রয়েছে। ওজন বাড়লে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে অর্থাৎ ডায়াবেটিস হয়। আর রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ে। ডায়াবেটিস এবং রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এ দুটোই হৃদরোগ হওয়ার বড় ঝুঁকি বা কারণ। মোটা মানুষের ওজন কমালে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে। ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতা বাড়ে; ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এর জন্য হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। শরীরের ওজন ১০ ভাগ কমাতে পারলে হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০ ভাগ কমে যায়।
শরীরের ঘনত্ব সূচক বা বিএমআই কারোর উচ্চতার তুলনায় শরীরের ওজন নির্দেশ করে। এর সাহায্যে শরীরের মোট চর্বির পরিমাণ অনুমান করা যায়। আর চর্বির পরিমাণ বাড়া মানেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়া। তবে যাদের শরীর পেশিবহুল কিংবা যাদের শরীরে অতিরিক্ত পানি জমেছে তাদের বেলায় বিএমআই সঠিক তথ্য নির্দেশ করে না। এ জন্য কোমরের পরিধি মাপা উচিত। পেটে চর্বি বাড়লে কোমরের পরিধি বেড়ে যায়। পুরুষের কোমরের পরিধি ৪০ ইঞ্চির বেশি আর মেয়েদের ৩৫ ইঞ্চির বেশি হলে তা বিপজ্জনক। বিএমআই ২৫ থেকে ২৯.৯ হলে শরীরে ওজন অধিক বলে গণ্য করা হয়। আর কারো এটা ৩০ বা তার চেয়ে বেশি হলে তাকে স্থূলকায় হিসেবে ধরা হয়।
যেসব উচ্চ রক্তচাপের রোগী স্থূলকায়, তাদের ওজন কমানোর জন্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়ামের ব্যবস্থা করা উচিত। ওজন কমানোর কোনো জাদুকরী পন্থা নেই সত্য; কিন্তু চেষ্টার অসাধ্য কিছু নেই। এক পাউন্ড অতিরিক্ত ওজন মানে অতিরিক্ত ৩৫০০ ক্যালরি। অতএব সপ্তাহে এক পাউন্ড ওজন কমাতে হলে প্রতিদিন ৫০০ ক্যালরির সমান কম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে অথবা ৫০০ ক্যালরি ব্যায়ামের মাধ্যমে খরচ করতে হবে। বলাবাহুল্য কম খেয়ে আর বেশি পরিশ্রম করে ৫০০ ক্যালরি খরচ করাই সহজসাধ্য।
0 comments:
Post a Comment