বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
মৌলভীবাজার, অগাস্ট ১২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সাপের কামড়ে শিশুটি মারা গেছে একদিন আগেই। কিন্তু সেই মৃত শিশুকে বাঁচিয়ে তুলতে 'কেরামতি' চলছে এক ওঝার। আর সেই কেরামতি দেখতে শত শত লোক ভিড় জমাচ্ছে মৌলভীবাজারের কূলাউড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে।
শুক্রবার দুপুরে হোসেনপুরে গিয়ে দেখা যায়, মৃত শিশুটিকে নিয়ে একটি সোফায় বসে আছেন তার বাবা আব্দুল মালিক। পাশের টেবিলে জ্বলছে মোমবাতি, আগরবাতি। টেবিলের ওপর বাটিতে দুধ-কলা। আর সোফা ঘিরে খোল-করতাল নিয়ে অবিরাম কীর্তন করে যাচ্ছে ওঝার কয়েকজন শিষ্য। পাশে থেকে ওঝা আব্দুর রহমান মাঝে মাঝেই হাঁক ছাড়ছেন- 'মা মনসা', 'মা মনসা'।
এই অবস্থা চলছে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে। তারপরও ক্লান্ত-বিধ্বস্ত মালিক প্রিয় সন্তানের প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় বসে আছেন লাশ কোলে নিয়ে। আট বছরের ছাদিকুর রহমানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল পুরো পরিবার।
কুলাউড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক অমিতাভ দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককমকে বলেন, চিকিৎসকরা যেখানে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেছেন, সেখানে এসব করা অর্থহীন।
'ঝাড়-ফুঁক' সামাজিক কুসংস্কার। ওঝার মিথ্যা কথায় বিশ্বাস না করে শিশুটিকে সমাহিত করা উচিত বলে মন্তব্য করেন অমিতাভ।
আব্দুল মালিক জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির পাশে তার বড় ছেলে ছাদিকুরকে সাপে (স্থানীয় ভাষায় আঠালি সাপ) কাটে। শিশুটি চিৎকার দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই অচেতন হয়ে পড়ে।
সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রথমে স্থানীয় মুসলিম এইড হাসপাতাল এবং পরে লক্ষীপুর মিশনে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, ছাদিকুর মারা গেছে।
এলাকাবাসী জানায়, ছাদিকুরকে যে সাপটি কামড়েছিল সেটি ধরে ফেলেন গ্রামের রফিক মিয়া। শিশুটিকে সাপে কাটার খবর আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পাশের উপজেলা বড়লেখার দক্ষিণভাগ (উত্তর) ইউনিয়নের হরিপুর গ্রাম থেকে ওঝা আব্দুর রহমান তার দলবল নিয়ে হাজির হন আব্দুল মালিকের বাড়িতে। প্রথমেই তিনি সাপটি ছেড়ে দেন। এরপর শুরু হয় ওঝার 'কেরামতি'।
আব্দুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, এ ধরনের অনেক 'রোগীই' তিনি ভালো করেছেন।
ছাদিকুর তাহলে কেন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে না- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি আব্দুর রহমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
0 comments:
Post a Comment