রাজধানীতে ফলের সবচেয়ে বড় বাজার সদরঘাটের পাশে বাদামতলী ফলপট্টি। সেখানে আছে ছোট-বড় প্রায় ৩০০ আড়ত। এখন প্রায় সব আড়তই আমের দখলে। আম আসছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। বিশেষ করে, উত্তরবঙ্গ থেকে।
গত ১৬ মে ওই বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। সাতটিতে অভিযান চালিয়ে চারটি আড়তের আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহারের প্রমাণ পান আদালত। রাসায়নিক ব্যবহারের অভিযোগে আদালত আট হাজার কোটি আম ধ্বংস করেন।
সম্প্রতি প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ওই বাজারের আম কিনে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ী ও আড়তের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বাজারে আসা প্রায় সব আম পাকানো হয় কৃত্রিমভাবে। আম পাকাতে ব্যবহার করা হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড অথবা ইথেফন নামের জৈব রাসায়নিক। ঢাকায় আনার আগে বা পরে আমে এসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। যেখান থেকে আম আসে, বিশেষ করে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরায় আমে রাসায়নিক ব্যবহার করে তারপরই তা ঢাকায় আনা হয়। তবে বাদামতলীর অনেক আড়তে আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হয়।
আমে কেন ইথেফন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড দেওয়া হয় জানতে চাইলে আবদুল জলিল নামের একজন আম ব্যবসায়ী বলেন, ‘রঙের লাইগ্যা। রঙেরই তো দুনিয়া, বুঝেন না।’ তবে তাঁর দাবি, তিনি এসব মেশান না।
একাধিক ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানান, ক্যালসিয়াম কার্বাইড বা ইথেফনের ব্যবহার এখন স্বাভাবিক বিষয়। রাসায়নিক ব্যবহার না করলে রাজশাহীর আম ঢাকা বা দেশের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে না, নষ্ট হবে। তাঁদের যুক্তি, গাছের সব আম একসঙ্গে পাকে না। সে ক্ষেত্রে একটি-দুটি করে আম বিক্রি করতে হবে। আবার গাছপাকা আম ঢাকা পর্যন্ত আনতে গেলে অনেক আম পচে যাবে। ব্যবসার স্বার্থে তাঁরা এসব ব্যবহার করেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে আম পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হতো। এখন কার্বাইডের চেয়ে ইথেফন বেশি ব্যবহার করা হয়। কারণ, ইথেফন দিলে আমের রং বেশি সুন্দর হয়।
বাদামতলীর ফল ব্যবসায়ীদের সমবায় সমিতির সভাপতি হারুন-অর-রশীদ প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের বাজারে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। বাদামতলী থেকে নেওয়া আমের নমুনায় কীভাবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড পাওয়া গেছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি ব্যাপারীরা আমে কোনো কেমিক্যাল দিয়ে থাকে, তাহলে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমরা তো আর দেখে বুঝি না, কোন আমে কী আছে।’ তাঁর দাবি, আম ঢাকায় নিয়ে আসার আগেই ব্যাপারীরা তাতে ওষুধ মেশান। যেখান থেকে আম ঢাকায় পাঠানো হয়, সেখানে স্থানীয়ভাবে এটি প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান তিনি।
0 comments:
Post a Comment