শারীরিক সুস্থতার মধ্যে মানসিক সুস্থতা অপরিহার্য। রোগবালাইমুক্ত থাকা যেমন দরকার তেমনি দরকার চিত্তের প্রফুল্লতা, মনের শান্তি সব মিলিয়েই মানসিক স্বাস্থ্য। মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে একথা ঠিক। কিন্তু মন খারাপ থাকলে শরীর ভালো থাকবে একথা ঠিক নয়।
মোটা দাগে ভাগ করলে মানসিক রোগ দুই প্রকারঃ
(১) নিউরোসিস
এ রোগটি মৃদু ধরনের মানসিক রোগ, অনেক মানুষের মধ্যে বেশি মাত্রায় থাকতে পারে। রোগীর ব্যবহার ও আচরণ পরিবার বা সমাজের জন্য হুমকির কারণ হয় না। সামান্য ওষুধ চিকিৎসা ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে প্রতিকার করা যায়। তবে এই রোগ বারবার হওয়ার প্রবণতা বেশি।
এ রোগটি জটিল ধরনের মানসিক রোগ, কম সংখ্যক লোক এ রোগে ভুগে থাকেন। চিকিৎসা মোটামুটিভাবে ফলদায়ক। সাইকোসিস রোগটি বারবার ফিরে আসার প্রবণতা নিউরোসিস রোগের চেয়ে কম।
হ্যাঁ, ওপরের আলোচিত যে কোনো রোগই মহিলাদের বেলায় হতে পারে। এমনকি মাদকাসক্তি পর্যন্ত। ইদানীংকালে মহিলাদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার ক্রমবর্ধমান, যা একটি জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
গর্ভাবস্থায় ১০ মাস ও সন্তান প্রসবের পর আরো এক বছর সময়কাল পর্যন্ত মেয়েদের কিছু কিছু মানসিক রোগ দেখা যায়। যা কিনা পুরুষদের কস্মিনকালেও হওয়ার কথা না। এগুলো ছাড়া মেয়েদের মধ্যে টেনশন, অবসেশন, হিস্টিরিয়া, ডিপ্রেশন ও খাদ্যগত রোগগুলো পুরুষদের চেয়ে বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। এ প্রবন্ধে আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করার পর থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের মনে কতগুলো মানসিক পরিবর্তন হয়। বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী যেমন-ফ্রয়েডসহ অন্যান্য নমস্য ব্যক্তি কতগুলো ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। কন্যাসন্তান জন্মের পর ৩ থেকে ৫ বছর বয়সকালে শিশুকন্যার পিতার প্রতি এক আকর্ষণ জন্মায়। কন্যাটি তখন পিতাকে পাওয়ার আশায় মা-কে তার প্রতিবন্ধ মনে করে। ওই সময়টায় সে মাকে মনে করে হিংসা করে এবং পিতার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা জন্মে আর মায়ের প্রতি জন্মে হিংসা। সাধারণভাবে বয়স বাড়তে থাকলে এই দ্বন্দ্বগুলো মিলিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কারণে যদি দ্বন্দ্বগুলো মনের মাঝে বজায় থাকে তাহলে একটি অসুখের সৃষ্টি হয় তাকে বলে ইলেক্ট্রোকমপ্লেক্স।
রুনার বয়স ১২ বছর। হাফপ্যান্ট, ফ্রক পরে খেলাধুলা করে। বাসায় আরো দুজন ছোট ভাই-বোন আছে। পিতা রশিদ উদ্দিন আহমেদ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আর বৈশিষ্টতার জন্যই তিনি বাড়িতে কম থাকেন। মা একজন কর্মজীবী মহিলা, আর্থিক কারণে নয়, জাস্ট অভ্যাসগত তিনি কাজ করেন। আর এই কাজের জন্য তিনি বাড়িতে কম থাকেন। সংসারটা চলে চাকর-চাকরাণীর কেয়ার-অফ-এ। একদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ১০টার দিকে বাথরুমে গিয়ে রুনা চিৎকার করে উঠল। স্বভাবতই পিতা-মাতা অনুপস্থিত। কাজের বুয়া দৌড়ে গিয়ে দেখল, দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, রুনা চিৎকার করছে, অনেকক্ষণ চেঁচামেচির পর দরজা খুলে কাজের বুয়া জমিরন বিবি যা দেখল তার সারমর্ম হচ্ছে ‘রুনার প্রথম মাসিক হয়েছে। বুয়া তার জ্ঞানে যতটা কুলায় রুনাকে সান্ত্বনা দান করল। পরে পিতা-মাতা ফিরে এলে রুনা আর ওই ঘটনাটি তার বাবা-মাকে জানাল না।’ এই মুহূর্তে রুনার দরকার মাসিকসংক্রান্ত বয়স অনুযায়ী জ্ঞানের ও সহানুভূতি। এই বয়সে কন্যাসন্তানের মধ্যে নানা রকম ভয়-ভীতি, রাগ ও ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স তৈরি হতে পারে। পাঠকগণ লক্ষ করুন, ওই ঘটনার পর থেকে রুনার চাল চলন পোশাক-আশাক পাল্টে গেল। সালোয়ার-পায়জামা এলো, বুকে একটা ওড়না জায়গা দখল করে নিল। ছেলেদের সাথে ছুটাছুটি, দৌড়াদৌড়ি বন্ধ হয়ে গেল। যদিও রুনার মনে দৌড়াদৌড়ি করার ইচ্ছা বজায় থাকল।
১. সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক মানসিক চাপ।
0 comments:
Post a Comment