মানুষের মুখের মাংসপেশিগুলোর কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ফেসিয়াল নার্ভ বা স্নায়ু। ফেসিয়াল নার্ভ বা স্নায়ুকে আবার সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভ বা স্নায়ু বলা হয়। মুখের প্যারালাইসিসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো স্ট্রোক এবং সেরিব্রোভাসকুলার এক্সিডেন্ট, যা উপরের মটর স্নায়ু কোষের রোগ নামেও পরিচিত। যখন ফেসিয়াল নার্ভ বা স্নায়ুর কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটে তখন সাধারণত মুখের এক পাশে প্যারালাইসিস ভাব হতে থাকে যা বেলস্ পালসি রোগ নামে পরিচিত। বেলস্ পালসিকে আবার মুখের নিচের মটর নিউরোন রোগও বলা হয়।
এ রোগে সাধারণত মুখের এক পাশে প্যারালাইসিস হয়ে থাকে। রোগীর জিহ্বার স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। লালার প্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে আসে। চোখের পানি আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণত এ অবস্থা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগীদের মাঝে বেশি লক্ষ্য করা যায়। আবার বয়স বেশি হলেও একই সমস্যা দেখা যেতে পারে। রোগী মুখের অবশ ভাবের অভিযোগ করে থাকেন যদিও পরীক্ষা করলে দেখা যায় রোগীর অনুভূতি ঠিক আছে। প্রথম সপ্তাহে অসম্পূর্ণ মুখের প্যারালাইসিস হলে রোগটির চিকিত্সা সাধারণত সহজ হয়ে থাকে। শতকরা ৮৫ ভাগ রোগী স্বতঃস্ফূর্তভাবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কিছু রোগীর স্থায়ীভাবে কিছু প্যারালাইসিস বা অবশ ভাব থেকে যায়।
সাধারণত কর্টিকোস্টেরয়েড বা প্রেডনিসোলন ট্যাবলেট দৈনিক ১ মিলিগ্রাম প্রতি কেজি শরীরের ওজন হিসেবে ১০ দিন খেতে হবে। এর সঙ্গে এসাইক্লোভির গোত্রভুক্ত ট্যাবলেট ভাইরাক্স ৪০০ মিলিগ্রাম দৈনিক ৪টি করে ১০ দিন খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। বেলস্ পালসি রোগটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কোনো উন্নতির লক্ষণ না দেখা যায় তাহলে ফেসিয়াল নার্ভে নির্দিষ্ট স্থানে অপারেশনের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। তবে এক্ষেত্রে এক্স-রে অথবা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে কোনো টিউমার আছে কি-না তা দেখে নিতে হবে। যদিও বেলস্ পালসি রোগ আপনার জীবনের বেল বা ঘণ্টা বাজাবে না, তবে জীবনের গতিপথ কিছুটা হলেও পরিবর্তন করবে। তাই এ ধরনের সমস্যায় কোনো অবহেলা না করে সঠিক এবং যথাযথ চিকিত্সা গ্রহণ করে স্বাভাবিক থাকুন।
হজরত শাহ্ আলী বাগদাদী (র.) মিরপুর মাজার শরীফ জেনারেল হাসপাতাল
মিরপুর-১, ঢাকা
0 comments:
Post a Comment