অল্প বয়সেই শুরু করেছিলেন তারা। আর আজ তারা প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী। কিন্তু বয়স এখনও ত্রিশের কোটা পেরোয়নি। এ যুগের কপোরেট দুনিয়ার রাজাধিরাজ মানা হয় বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধারদেরকেই। চিফ একজিকিউটিভ অফিসার, সংক্ষেপে সিইও পদের এই ব্যাক্তিদের হাতেই আজকের এই পেশাদার পৃথিবী। তরুণ বয়সে প্রতিষ্ঠা করা কোম্পানিগুলোর এখন দাম আর প্রভাবই সিইওদের ত্রিশের কম বয়সেই বসিয়েছে প্রযুক্তিবিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে।
সারা বিশ্বে টেকনোলজির ওপর আধিপত্য বিস্তার করা এরকমই কিছু সিইওর তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন আন্ডারথার্টিসিইও-এর প্রতিষ্ঠাতা জেরার্ড ও'টুল। তালিকায় স্থান পাওয়া এইসব সিইওর কারোর বয়সই কিন্তু ৩০ এর ওপরে নয়। ৩০ বছরের কম বয়সী কিন্তু এর মধ্যেই দুনিয়াতে প্রভাব বিস্তার করে ফেলা ৩০ সিইওর এই তালিকা এর মধ্যেই হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে অনলাইনে। ৩০ এর নিচের যেসব সিইও তাদের প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন এবং সফলভাবে বাস্তবায়িত হওয়া সেইসব প্রকল্প মানুষের জীবনে কতখানি প্রভাব ফেলেছে, ও’টুলের তালিকা নির্ধারণের মানদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে এগুলোই।
চলুন তাহলে জেনে নিই তালিকার শীর্ষ দশ সিইওর কথা।
২০০৪ সালে মার্ক জুকারবার্গ নামের এক তরুণ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডর্মরুমে বসে তৈরি করেন এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুক। মানুষের জীবন পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেওয়া ফেসবুকের বর্তমান ইউজার সংখ্যা ৫০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ফেসবুকের কল্যাণে পৃথিবীর সবচাইতে কমবয়সী বিলিয়নিয়ারের খাতায় নাম লেখান জুকারবার্গ। ২০১০ সালে ফেসবুকের মূল্য দাড়িয়ে যায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও ওপরে।
বিশ শতকের শুরুর দিকেই ভবিষ্যৎদ্রষ্টা মার্ক সরাসরিই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন মানুষের যোগাযোগ পদ্ধতিকে। আর সেই চ্যালেঞ্জে তিনি দারুণভাবেই সফল। ফেসবুক যতোটা কম সময়ে মানুষের সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে, এর চেয়ে কম সময়ে প্রযুক্তির কোন মাধ্যমই তা করতে পারেনি। আর তাই ২০১০ সালে ‘পারসন অফ দ্য ইয়ার’ হিসেবে টাইম ম্যাগাজিনের স্বীকৃতি পান মাত্র ২৫ বছর বয়সী জুকারবার্গ।
অ্যান্ড্রু মেসন প্রতিষ্ঠিত গ্রুপনের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে এবং মাত্র দু বছরের মাথাতেই তা হয়ে ওঠে কর্পোরেট বিশ্বের সবচেয়ে কম সময়ে বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের সূচক ছুয়ে ফেলা প্রতিষ্ঠান। গ্রুপন এরই মধ্যেই আশা করছে ২০১১ সালের শেষে তাদের রেভিনিউ ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠবে।
গ্রুপনকে কিনে নেওয়ার জন্য গুগল ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো; কিন্তু অ্যান্ড্রু দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করেই সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। অ্যান্ড্রু নিঃসন্দেহেই অনলাইনে মানুষের কেনাকাটা এবং বাণিজ্যের লেনদেনের ধারণাকে আমূল পাল্টে দিয়েছেন। আর তাইতো প্রতিদিন হাজারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক সমস্যাগুলো সাফল্যের সঙ্গেই সমাধান করছে এই অনলাইন প্রতিষ্ঠানটি।
২০০৩ সালে রায়ান এবং পল মিলে আইকনট্যাক্ট শুরু করেন। ইমেইল মার্কেটিং এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা ম্যানেজমেন্টের এই ব্যবসা তারা শুরু করেছিলেন গুগলের অ্যাডওয়ার্ডস ভিত্তি করে। পরে এই প্রতিষ্ঠানটির ক্রেতা দাঁড়ায় ৬৩ হাজারেরও বেশি। ২০১০ সালে এসে মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।
গুরুবক্স চাহাল ২০০৯ সালে জিওয়ালেট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া কারেন্সি প্ল্যাটফর্মের এই সার্ভিসটি ১ বছর না পেরোতেই ১২ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করে। জিওয়ালেটের আগে তৈরি করা দুটি অ্যাড নেটওয়ার্ক বিক্রি করেন ৪০ মিলিয়ন এবং ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি দামে। রেডিয়ামওয়ান ব্র্যান্ডের নতুন অ্যাড নেটওয়ার্ক খুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাড নেটওয়ার্ক হিসেবে শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন গুরুবক্স।
নিউ ইয়র্ক শহরে নতুন বিষয় খুঁজে বের করতে বন্ধু এবং পার্টনার ডেনিস ক্রাউলেকে সাহায্যের জন্যই ফোরস্কয়ার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নাভিন সেভালডুরাল। লোকেশন ভিত্তিক নেটওয়ার্কিং জায়ান্ট হিসেবে ফোরস্কয়ার ইতোমধ্যে শীর্ষে চলে এসেছে। ক্রেতাদের সঙ্গে যুক্ত করতে ফোরস্কয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ম্যাশএবল বর্তমান সময়ের অন্যতম সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রতিবেদনের বৃহত্তম ওয়েবসাইট। ২০০৫ সালে পিট ক্যাশমোর এই সাইটটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সাইটটির বর্তমান মাসিক পেজভিউ ৩০ মিলিয়নেরও বেশি যা বর্তমান সময়ের আরেকটি নিউজসাইট টেকক্রাঞ্চকে ছাপিয়ে গেছে। আর ম্যাশএবল জনপ্রিয় হবার কারণে এর রেভিনিউ কতো তা সহজেই অনুমেয়।
২০০৭ সালে টাম্বলআর শুরু করেন ডেভিড কার্প । আর এই সাইটটি চালু করতে নিজের পকেটের অর্থ খরচ করেছিলেন তিনি। এজন্য তিনি আগে সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করে অর্থ জমিয়েছিলেন। এই সাইটটিতে প্রতিদিন ১৫ হাজারেরও বেশি নতুন ব্যবহারকারী যোগ দিচ্ছেন এবং প্রতিদিন পোস্ট সংখ্যা দাঁড়ায় ২ মিলিয়নেরও বেশি। সাইটটি আরো জনপ্রিয় করার জন্য টাম্বলআর এখন বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ফান্ড পাচ্ছে । এটি ওয়েবে মোস্ট ভিজিটেড সাইটগুলোর মধ্যে এলেক্সা র্যাংকিংয়ে সেরা ১০০-এর মধ্যে রয়েছে।
0 comments:
Post a Comment