সংখ্যা প্রচুর। বলতে গেলে সবগুলোর চাষই সহজ। দীর্ঘকাল চর্চার ফলে এর কালটিভর বা আবাদিত গাছগুলো প্রায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি টবে একে খুব সুন্দর মানায়। গাছের গুঁড়ি হাতের কবজির সমান পুষ্ট ও মোটা করে রাখা যায়। অনেকটা বনসাইয়ের মতো। ওর থেকে ফুল ফোটে প্রচুর। তখন লাল রঙের নিবিড় অজস্র ফুল থোকায় থোকায় দেখতে খুব সুন্দর। সাদা ফুলকেও এ রকম করা যায়।
রঙ্গন একান্তভাবে এই উপমহাদেশের ফুল। সাদা একটি প্রজাতি চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলে বুনো অবস্থায় রয়েছে। সেখান থেকে বৌদ্ধরা একে ঘরের আঙিনায় রেখেছে যত্ন করে। এর উচ্চতা আট-দশ হাতের মতো। একে বৌদ্ধরা বিয়ু ফুল বলে। চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষে বৌদ্ধরা এ ফুল তুলে ঘরের দুয়ারে ও নানা জায়গায় বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়। খুব সম্ভবত এর কোনো ঔষধি গুণ আছে। তা না হলে বহু কাল থেকে একে কেন এভাবে নিমের পাতা ও ডালের মতো ব্যবহার করবে! এর গবেষণা হওয়া দরকার।
রঙ্গন খুব কষ্টসহিষ্ণু। এর প্রজাতির সংখ্যা যেমন প্রচুর তেমনি সবগুলোর চাষই সহজ। তবে খুব বড় থোকার সুপারবা সুখী প্রকৃতির গাছ এবং সহজলভ্যও নয়। আর রঙ্গনের মধ্যে সিঙ্গাপোরেনসিস্ প্রজাতিটিই বোধ হয় সবচেয়ে সুন্দর, এবং বেশির ভাগ সাদা ফুলের রঙ্গনেই মৃদু সুগন্ধ রয়েছে। সিঙ্গাপোরেনসিস্ অর্থ সিঙ্গাপুরের।
চিরাচরিত রঙ্গনের ফোটার সময় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল। এদের সবার ফুল ফোটে থোকায় থোকায়। একেকটি থোকায় শতেক খানেক ফুল থাকা কোনো ব্যাপারই নয়। ফুল ফোটা শেষ হয়ে গেলে গাছ হালকাভাবে ছেঁটে দেওয়া ভালো।
রঙ্গনের ফোটার সময় গ্রীষ্ম হলেও সুরভি রঙ্গন ফোটে বসন্তে। বেশ কয়েক বছর ধরে ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার, বলধা গার্ডেন ও রমনা পার্কের গাছগুলোতে এটি আমি লক্ষ করছি। সুরভি রঙ্গনের ফুলের থোকায় অনেক মরা ফুল। থোকায় বেশি ফুল মননিবন্ধ থাকে বলে বাসি ফুলগুলো ঝরে পড়তে পারে না। আটকে থাকে। পত্রিকার জন্য ছবি তোলার সময়ও বাছাই করা থোকার ছবি তুলেছেন কালের কণ্ঠের ফটোশিকারি হাসান। দিন দশেক আগের সন্ধেতে বৃষ্টি পড়ছিল। বাদুড়ের ছবি তোলার সময় বৃষ্টিসিক্ত রঙ্গনের ছবি তুলতে বলি। বৃষ্টি ও সন্ধের নেশায় কি ভালো ছবি তোলা এত সহজ!
সুরভি রঙ্গন ও লাল রঙ্গনের খুব ভালো বেড়া, ঘন-ছোট ঝোপ করা যায়। আবার নয়-দশ ইঞ্চি করে কেটে মোটা গুঁড়ি করে ফুল ফোটানো রঙ্গনের সৌন্দর্যের খুব কদর। এটি সুন্দর একটি টবে রেখে আবেশ সৃষ্টি সম্ভব। এ রকম লাল রঙ্গনের টব কিনতে পাবেন নার্সারিতে। সুরভি রঙ্গনের তেমন একটি টব করলে সুরভি-মিথুন সম্ভব। আসলে ভালো কিছু পেতে হলে বড় ত্যাগ বা কঠোর অনুশীলন চাই। নার্সারিতে দেখবেন এ রকম ও অন্য সব টব প্রখর রোদ-বৃষ্টিতে রাখা হয়। ঘরে রাখলেও তাই তাকে প্রচুর রৌদ্র-সেবন করাতে হয়। আবার সুখী জাতের রঙ্গনকে প্রখর রোদ খাওয়ানো চলবে না। সুখী ও হাইব্রিডদের তাই তাদের মর্জিমতো সুখে থাকতে দিতে হয়।
সুরভি রঙ্গন ও লাল রঙ্গনের ঘন ঝোপ বা বেড়া, যাকে 'হেজ' বলে, তাদের বর্ষাকালে না ছাঁটলে পরের বসন্ত-গ্রীষ্মে ফুলও পাবেন। এ ঝোপ সৃষ্টির কাজে পুষ্পবিদরা ডাফি হাইব্রিড ব্যবহার করতে বলেন।
ওই যে সিঙ্গাপোরেনসিস্ প্রজাতিটি দাবাকলমে এবং অন্য সব প্রজাতি কাটিংয়ের সাহায্যে বংশবৃদ্ধি। আবার ইকজোরা পার্ভিফ্লোরার ফুল দেখতে খুব ভালো না লাগলেও ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ আছে। ইকজোরা কক্কোনিয়া ঝোপালো তিন-চার হাত উঁচু গাছ। এর চকচকে চামড়ার মতো পাতা। এটি শেষ বসন্ত থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুল দেয়। বেশ বড় থোকায় ফুল ফোটে। এ সময় টবকে ঘর থেকে বাইরে বা বাইরে থেকে ঘরে বেশি টানাটানি না করা ভালো। এর সাদা, হলুদ, ফিকে গোলাপি, ফ্যাকাশে লাল, লাল ফুল সারা গ্রীষ্ম-বর্ষা মাতিয়ে রাখবে। ঘরে বা বারান্দায় প্রচুর আলোয় রাখুন হে পুষ্পপ্রেমিকা-প্রেমিক। এ টব ছায়ায় অভ্যস্ত হয়ে গেলে সরাসরি কড়া রোদে রাখবেন না। গাছের নিচে রৌদ্রছায়ায় রেখে পুষ্টি দিন।
বুনো রঙ্গন বা সাদা পাহাড়ি রঙ্গনকে যত্ন করে টবে বা আঙিনায় রাখতে পারেন। পরীক্ষা করে দেখুন। একবার ব্যর্থ হয়ে পিছপা হবেন? না, ও মানবস্বভাব নয়, আপনাকে মানায় না। লাল-গোলাপি রঙ্গনের টব নার্সারি থেকে সঞ্চয় করলে সমস্যা খুব কম। নিজের হাতে করায় অনেক ঝকমারি থাকলেও আনন্দ অফুরান।
0 comments:
Post a Comment