যুক্তরাষ্ট্রে আছেন ১৪ বছর ধরে। প্রথমে ফিলাডেলফিয়া, তারপর ক্যালিফোর্নিয়া, সবশেষে লাস ভেগাসে। যেখানেই গেছেন, সেরা চিকিৎসক হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন। সেরা তরুণ গবেষক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন আমেরিকান সোসাইটি অব ইকোকার্ডিওগ্রাফি ও আমেরিকান সোসাইটি অব নিউক্লিয়ার কার্ডিওলজি থেকে। ২০০৭ সাল থেকে তিনি নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনে অধ্যাপক ও হূদেরাগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরই নেতৃত্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হূদেরাগ কেন্দ্র আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের স্বর্ণপদক পুরস্কার পেয়েছে। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তাঁর এই সাফল্য ভাগ্যের অনুকম্পা নয়, কঠোর পরিশ্রম ও মেধার ফল, এ কথা তাঁর মার্কিন ও বাঙালি সহকর্মী ও বন্ধুরা সবাই মানেন।
এমন একজন সফল ও কীর্তিমান মানুষ, অথচ তাঁর সঙ্গে যখন কথা হলো, পুরোটা সময় ব্যয় করলেন বাংলাদেশ নিয়ে কী করা যায়, তাঁর সে ভাবনার কথা জানাতে। ‘দেখুন, আমি বাংলাদেশের মানুষ। পেশার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে থাকি বটে, কিন্তু মনের মধ্যে সারাক্ষণ থাকে বাংলাদেশ।’ টেলিফোনে বললেন ডা. হাফিজুল আহসান। সন্ধ্যাবেলা হাসপাতালে তাঁর নিয়মিত ‘রাউন্ড’ সেরে মাত্র ঘরে ফিরেছেন। সম্ভবত ক্লান্ত, কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে হূদেরাগ নিয়ে নতুন কী কী করা যায়, তার সবিস্তার বিবরণ দিলেন।
ডা. চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো হার্ট অ্যাটাক বা হূদ্-আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগনির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসার অভাব। এ দেশে মানে যুক্তরাষ্ট্রে, হার্ট অ্যাটাক হলে বন্ধ আর্টারি বা ধমনিতে রক্ত চলাচল পুনরুদ্ধার করাই হচ্ছে চিকিৎসার লক্ষ্য। এ কাজটা যদি ৯০ মিনিটের ভেতর করা যায়, তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে আসে। বাংলাদেশে সে কাজটা করা গেলে অনেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।’
হার্ট অ্যাটাকের পরপরই হূদ্যন্ত্রের দুর্বলতা শুরু হয়, অনেক সময় হূদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এর নাম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। হূদ্যন্ত্রের ছন্দপতন বা আকস্মিক বৈকল্যের আরেক নাম ভেন্ট্রিকিউলার অ্যারিদমিয়া। হূৎস্পন্দন দ্রুত স্বাভাবিক না হলে তার পরিণাম অবধারিত মৃত্যু। ডা. চৌধুরী জানালেন, ভেন্ট্রিকিউলার অ্যারিদমিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা খুব কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। এর জন্য যা দরকার তা হলো ‘ডিফাইব্রিলেটর’ নামের একটি যন্ত্র। খুব দুর্মূল্যের কোনো জিনিস নয়, পাওয়াও খুব দুষ্কর নয়। সমস্যা হলো আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে যথেষ্ট অবহিত নয়। রোগের লক্ষণ বুঝে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে অনেক লোকের জীবন বাঁচানো সম্ভব। আর এই কাজটিই বাংলাদেশে একাধিক হাসপাতাল ও সেবাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে করার চেষ্টায় রয়েছেন ডা. চৌধুরী। ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল (বারডেম) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন তাঁকে এ ব্যাপারে সমর্থন জোগাচ্ছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বা অন্য বড় বড় শহরে কমবেশি চিকিৎসার সুযোগ আছে। গ্রামাঞ্চলে উন্নত মানের চিকিৎসকও নেই, চিকিৎসালয়ও নেই। অথচ এখন সবখানেই ঘরে ঘরে মুঠোফোন রয়েছে। অনেকের স্মার্টফোনও আছে। রোগীর অবস্থা জানিয়ে অথবা তাঁর হূদ্যন্ত্রের ইসিজি রিপোর্টটি যদি সেলফোনে দ্রুত যথাযথ স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে অবস্থার সুরাহা সম্ভব বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। এ নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে বারডেম তাঁকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
‘যুক্তরাষ্ট্রে থাকি বা বাংলাদেশে, মানুষকে সাহায্য করার জন্য দরকার একধরনের মানসিকতা। একজন মানুষকেও যদি বাঁচাতে পারি, সেটাই হবে চিকিৎসক হিসেবে আমার সাফল্য,’ বললেন ডা. চৌধুরী।
আমিই বাংলাদেশ নিয়ে পরামর্শ ও তথ্য যোগাযোগ: ab@prothom-alo.info
0 comments:
Post a Comment