ছোট্ট মেয়েটির নাম ‘চীন’।
কেন, বাঙালি মেয়ের নাম চীন কেন?
তাহলে গল্পটা বলি। সেটা ২০১০ সালের কথা। দিনটি ছিল ১২ নভেম্বর। চট্টগ্রাম নৌবাহিনী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে করিডরে পায়চারি করছেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর মনে গভীর উৎকণ্ঠা, কপালে দুশ্চিন্তার রেখা। তাঁর আসন্নপ্রসবা স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস আছেন জরুরি বিভাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই জটিল। দীর্ঘদিন ধরে হাইপারটেনশন ও হূদেরাগে ভুগছেন তিনি। এখন মা ও অনাগত সন্তান দুজনের জীবনই সংকটাপন্ন।
অকূল সমুদ্রে পড়েছেন আনোয়ার হোসেন। এ সময় তাঁকে কূলের দিশা দিলেন নৌবাহিনী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁদের কাছে জানা গেল ‘আর্ক পিস’ নামের এক আশ্চর্য জাহাজের কথা। চীনা গণমুক্তি ফৌজের এই জাহাজ তখন নোঙর করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। জাহাজটি আসলে একটি অত্যাধুনিক ভাসমান হাসপাতাল। সেখানে আছেন বিশ্বসেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
স্ত্রী-সন্তানের জীবন বাঁচাতে আনোয়ার হোসেন ছুটে গেলেন সেই জাহাজে। সেখানকার চিকিৎসকদের জানালেন তাঁর বিপদের কথা। সব শুনে সেখানকার চিকিৎসকেরা এলেন নৌবাহিনী হাসপাতালে। চার সদস্যের একটি চিকিৎসক দল অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করাল। মা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ। চীনা চিকিৎসকদের প্রতি আবেগে ও কৃতজ্ঞতায় মা-বাবা মেয়ের নাম রাখলেন ‘চীন’। পুরো নাম ওহি আলিফা, ডাক নাম চীন। এই হচ্ছে নামকরণের গল্প। গল্পের বাকি অংশটিও আবেগময় ও আনন্দঘন। আর্ক পিসের চিকিৎসকদের সঙ্গে সেই দম্পতির দেখা হলো গত ২২ আগস্ট। প্রায় তিন বছর পর চীনের জাহাজ-হাসপাতালটি আবার নোঙর করেছে বাংলাদেশে। তিন বছরের শিশুটিকে দেখেই কোলে টেনে নিলেন জাহাজের চিকিৎসক দলের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল গুয়ান বো লিন। আবেগপূর্ণ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বললেন, ‘তিন বছর আগে প্রথমবার এই মেয়েটির হাত ধরেছিলাম আমি। “চীন”-এর জন্মদিন আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না, কেন জানো? আমার নিজের মেয়েটিরও জন্ম হয়েছিল ওই একই দিনে, আমি তখন এই দেশে।’
জাহাজের চিকিৎসক ও সেবিকাদের কোলে কোলে ঘুরে মিটিমিটি হাসছিল চীন। বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে চিকিৎসক ও সেবিকাদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া পুতুলটি। বো লিনের কাছে মেয়েটি চীন ও বাংলাদেশের সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের প্রতীক।
কেন, বাঙালি মেয়ের নাম চীন কেন?
তাহলে গল্পটা বলি। সেটা ২০১০ সালের কথা। দিনটি ছিল ১২ নভেম্বর। চট্টগ্রাম নৌবাহিনী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে করিডরে পায়চারি করছেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর মনে গভীর উৎকণ্ঠা, কপালে দুশ্চিন্তার রেখা। তাঁর আসন্নপ্রসবা স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস আছেন জরুরি বিভাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই জটিল। দীর্ঘদিন ধরে হাইপারটেনশন ও হূদেরাগে ভুগছেন তিনি। এখন মা ও অনাগত সন্তান দুজনের জীবনই সংকটাপন্ন।
অকূল সমুদ্রে পড়েছেন আনোয়ার হোসেন। এ সময় তাঁকে কূলের দিশা দিলেন নৌবাহিনী হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁদের কাছে জানা গেল ‘আর্ক পিস’ নামের এক আশ্চর্য জাহাজের কথা। চীনা গণমুক্তি ফৌজের এই জাহাজ তখন নোঙর করেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। জাহাজটি আসলে একটি অত্যাধুনিক ভাসমান হাসপাতাল। সেখানে আছেন বিশ্বসেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
স্ত্রী-সন্তানের জীবন বাঁচাতে আনোয়ার হোসেন ছুটে গেলেন সেই জাহাজে। সেখানকার চিকিৎসকদের জানালেন তাঁর বিপদের কথা। সব শুনে সেখানকার চিকিৎসকেরা এলেন নৌবাহিনী হাসপাতালে। চার সদস্যের একটি চিকিৎসক দল অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করাল। মা ও মেয়ে দুজনই সুস্থ। চীনা চিকিৎসকদের প্রতি আবেগে ও কৃতজ্ঞতায় মা-বাবা মেয়ের নাম রাখলেন ‘চীন’। পুরো নাম ওহি আলিফা, ডাক নাম চীন। এই হচ্ছে নামকরণের গল্প। গল্পের বাকি অংশটিও আবেগময় ও আনন্দঘন। আর্ক পিসের চিকিৎসকদের সঙ্গে সেই দম্পতির দেখা হলো গত ২২ আগস্ট। প্রায় তিন বছর পর চীনের জাহাজ-হাসপাতালটি আবার নোঙর করেছে বাংলাদেশে। তিন বছরের শিশুটিকে দেখেই কোলে টেনে নিলেন জাহাজের চিকিৎসক দলের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল গুয়ান বো লিন। আবেগপূর্ণ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বললেন, ‘তিন বছর আগে প্রথমবার এই মেয়েটির হাত ধরেছিলাম আমি। “চীন”-এর জন্মদিন আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না, কেন জানো? আমার নিজের মেয়েটিরও জন্ম হয়েছিল ওই একই দিনে, আমি তখন এই দেশে।’
জাহাজের চিকিৎসক ও সেবিকাদের কোলে কোলে ঘুরে মিটিমিটি হাসছিল চীন। বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে চিকিৎসক ও সেবিকাদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া পুতুলটি। বো লিনের কাছে মেয়েটি চীন ও বাংলাদেশের সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের প্রতীক।
ভালোবাসার তরি
রণতরির কথা শোনা যায়। বৈরী দেশগুলো পরস্পরকে হুমকি দিতে, নিজেদের শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটাতে সমুদ্রে অস্ত্রে সজ্জিত রণতরি মোতায়েন করে। কিন্তু ভালোবাসার তরি মোতায়েনের ঘটনা বিরল। ২০১০ সালে সেই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই বছর আগস্ট মাসে চীনা গণমুক্তি ফৌজের উদ্যোগে ভারত মহাসাগরে যাত্রা শুরু করে ‘আর্ক পিস’ নামের জাহাজ-হাসপাতালটি।
উদ্দেশ্য ছিল সাগরে মানুষদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং বিভিন্ন দ্বীপে অবস্থানরত চীনা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসা করা। কিন্তু ধীরে ধীরে সেবা-ভালোবাসার পরিধি বাড়ল। পৃথিবীর দেশে দেশে নোঙর করে গরিব-দুস্থ-অসহায় মানুষকে সেবা দেওয়ার এক মহান ব্রতে নিজেকে যুক্ত করল ‘আর্ক পিস’।
শুরু থেকেই এই জাহাজে আছেন এমন একজন সেবিকা বললেন, ‘পীড়িত মানুষকে সেবা করে তাদের ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দ যুদ্ধজয়ের আনন্দের চেয়েও বেশি।’
প্রথম বছরেই ৮৮ দিনে ১৫ হাজার নটিক্যাল মাইল ভ্রমণ করে ‘আর্ক পিস’। বাংলাদেশ ছাড়াও তানজানিয়া, কেনিয়া, জিবুতিসহ অন্তত ১০টি দেশে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে জাহাজটি। এ সময় ১২ হাজার ৮০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে এই জাহাজের চিকিৎসক দল। শল্যচিকিৎসা করেছে ৯৭ জনের। একই সময়ে এই জাহাজের রোগনির্ণয়কেন্দ্রে শারীরিক রোগ নির্ণয় করা হয়েছে দুই হাজার ১০০ রোগীর।
এসব দেশের বন্দরে যখন ‘আর্ক পিস’ নোঙর করে, তখন পীড়িত-দুস্থ মানুষের কাছে জাহাজটি হয়ে ওঠে ‘ঈশ্বরের পাঠানো এক আলোর ইশারা’।
জাহাজটি আসলে ৩০০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। বার্ন ওয়ার্ড, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ), ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড এবং দন্ত চিকিৎসাকক্ষ ছাড়াও এখানে রয়েছে আটটি অস্ত্রোপচার কক্ষ, যেগুলোতে দিনে ৪০ জন রোগীকে অস্ত্রোপচার করা যায়।
চিকিৎসক, সেবক-সেবিকা মিলিয়ে শতাধিক কর্মীর একটি বাহিনী আছে এই জাহাজে। মোট ৪৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে অন্তত ১৫ জন আছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রিধারী। এ ছাড়া আছেন শল্যচিকিৎসক, ইন্টারনাল মেডিসিন, ধাত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা, নাক-কান-গলা এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী আকুপাংচার বিশেষজ্ঞরা। গত ২২ আগস্ট সরেজমিনে এই জাহাজে গিয়ে মনে হলো আমাদের দেশের আধুনিক ও উন্নতমানের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চেয়েও ভালো ব্যবস্থাপনা এই জাহাজ-হাসপাতালে। শত শত রোগী সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছেন। জাহাজের কর্মীরা ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলছেন রোগীদের সঙ্গে। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন কক্ষে চিকিৎসকদের কাছে পাঠাচ্ছেন। তাঁদের ‘খিচুড়ি ভাষা’ শুনে রোগীদের অনেকেই মজা পেয়ে হাসাহাসি করছেন বটে, তবে আন্তরিকতায় মুগ্ধ সবাই।
আবদুর রহমান (৫৪) নামের একজন রোগী বললেন, ‘সিস্টার মানে তো বোন, এই জাহাজের চীনা সিস্টারদের (সেবিকা) মায়া-দয়া দেখলে সত্যিকারের বোনের মতো মনে হয়।’
আবদুর রহমান এসেছেন কাঁধ ও কোমরের ব্যথা নিয়ে। পাঁচ-ছয় বছর ধরে ব্যথায় ভুগছেন তিনি। নানা রকম চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয়নি। আকুপাংচার চিকিৎসার অনেক প্রশংসা শুনেছেন, তাই ছুটে এসেছেন এখানে।
জেসমিন আকতার (৪০) নামের এক মহিলা বেরিয়ে আসছিলেন চিকিৎসকের কক্ষ থেকে। তাঁর শারীরিক সমস্যা জানাতে রাজি নন তিনি, শুধু বললেন, ‘অমায়িক ব্যবহার ডাক্তার সায়েবের। ওষুধ দিছে, এবার ভালা অইয়া যামু।’
এখানে প্রতিদিন শত শত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া ছাড়াও ‘আর্ক পিসের’ চিকিৎসকেরা নৌবাহিনী হাসপাতাল, আশার আলো এবং নৌবাহিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিকিৎসা শিবিরেও রোগী দেখেছেন।
ছয় দিনের সফর শেষ করে ২৫ আগস্ট ফিরে গেছে ‘আর্ক পিস’। ফিরে যাওয়ার আগে অন্তত ১০ হাজার রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন এই হাসপাতাল-জাহাজের চিকিৎসকেরা। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি চিকিৎসক দলও সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল তাঁদের। আর্ক পিসের ৪৬ জন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ১৯ জন চিকিৎসক যৌথভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ১৫০ জন রোগীর দেহে সফল অস্ত্রোপচার করেছেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চিকিৎসকদের সঙ্গে চারটি মেডিকেল সিম্পোজিয়াম করেছেন আর্ক পিসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সার্জন কমান্ডার মুহাম্মদ কবির আহমদ খান বললেন, ‘আর্ক পিস আসার ফলে আমাদের রোগীরা যেমন উপকৃত হয়েছেন, তেমনি এখানকার চিকিৎসকেরাও নানা বিষয়ে চীনের চিকিৎসকদের সঙ্গে মত ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পেয়েছেন। এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে আমাদের কাজে লাগবে।’
রণতরির কথা শোনা যায়। বৈরী দেশগুলো পরস্পরকে হুমকি দিতে, নিজেদের শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটাতে সমুদ্রে অস্ত্রে সজ্জিত রণতরি মোতায়েন করে। কিন্তু ভালোবাসার তরি মোতায়েনের ঘটনা বিরল। ২০১০ সালে সেই ঘটনাটি ঘটেছে। ওই বছর আগস্ট মাসে চীনা গণমুক্তি ফৌজের উদ্যোগে ভারত মহাসাগরে যাত্রা শুরু করে ‘আর্ক পিস’ নামের জাহাজ-হাসপাতালটি।
উদ্দেশ্য ছিল সাগরে মানুষদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং বিভিন্ন দ্বীপে অবস্থানরত চীনা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের চিকিৎসা করা। কিন্তু ধীরে ধীরে সেবা-ভালোবাসার পরিধি বাড়ল। পৃথিবীর দেশে দেশে নোঙর করে গরিব-দুস্থ-অসহায় মানুষকে সেবা দেওয়ার এক মহান ব্রতে নিজেকে যুক্ত করল ‘আর্ক পিস’।
শুরু থেকেই এই জাহাজে আছেন এমন একজন সেবিকা বললেন, ‘পীড়িত মানুষকে সেবা করে তাদের ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দ যুদ্ধজয়ের আনন্দের চেয়েও বেশি।’
প্রথম বছরেই ৮৮ দিনে ১৫ হাজার নটিক্যাল মাইল ভ্রমণ করে ‘আর্ক পিস’। বাংলাদেশ ছাড়াও তানজানিয়া, কেনিয়া, জিবুতিসহ অন্তত ১০টি দেশে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে জাহাজটি। এ সময় ১২ হাজার ৮০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে এই জাহাজের চিকিৎসক দল। শল্যচিকিৎসা করেছে ৯৭ জনের। একই সময়ে এই জাহাজের রোগনির্ণয়কেন্দ্রে শারীরিক রোগ নির্ণয় করা হয়েছে দুই হাজার ১০০ রোগীর।
এসব দেশের বন্দরে যখন ‘আর্ক পিস’ নোঙর করে, তখন পীড়িত-দুস্থ মানুষের কাছে জাহাজটি হয়ে ওঠে ‘ঈশ্বরের পাঠানো এক আলোর ইশারা’।
জাহাজটি আসলে ৩০০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল। বার্ন ওয়ার্ড, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ), ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড এবং দন্ত চিকিৎসাকক্ষ ছাড়াও এখানে রয়েছে আটটি অস্ত্রোপচার কক্ষ, যেগুলোতে দিনে ৪০ জন রোগীকে অস্ত্রোপচার করা যায়।
চিকিৎসক, সেবক-সেবিকা মিলিয়ে শতাধিক কর্মীর একটি বাহিনী আছে এই জাহাজে। মোট ৪৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে অন্তত ১৫ জন আছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রিধারী। এ ছাড়া আছেন শল্যচিকিৎসক, ইন্টারনাল মেডিসিন, ধাত্রী ও প্রসূতিবিদ্যা, নাক-কান-গলা এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী আকুপাংচার বিশেষজ্ঞরা। গত ২২ আগস্ট সরেজমিনে এই জাহাজে গিয়ে মনে হলো আমাদের দেশের আধুনিক ও উন্নতমানের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চেয়েও ভালো ব্যবস্থাপনা এই জাহাজ-হাসপাতালে। শত শত রোগী সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছেন। জাহাজের কর্মীরা ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলছেন রোগীদের সঙ্গে। প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন কক্ষে চিকিৎসকদের কাছে পাঠাচ্ছেন। তাঁদের ‘খিচুড়ি ভাষা’ শুনে রোগীদের অনেকেই মজা পেয়ে হাসাহাসি করছেন বটে, তবে আন্তরিকতায় মুগ্ধ সবাই।
আবদুর রহমান (৫৪) নামের একজন রোগী বললেন, ‘সিস্টার মানে তো বোন, এই জাহাজের চীনা সিস্টারদের (সেবিকা) মায়া-দয়া দেখলে সত্যিকারের বোনের মতো মনে হয়।’
আবদুর রহমান এসেছেন কাঁধ ও কোমরের ব্যথা নিয়ে। পাঁচ-ছয় বছর ধরে ব্যথায় ভুগছেন তিনি। নানা রকম চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয়নি। আকুপাংচার চিকিৎসার অনেক প্রশংসা শুনেছেন, তাই ছুটে এসেছেন এখানে।
জেসমিন আকতার (৪০) নামের এক মহিলা বেরিয়ে আসছিলেন চিকিৎসকের কক্ষ থেকে। তাঁর শারীরিক সমস্যা জানাতে রাজি নন তিনি, শুধু বললেন, ‘অমায়িক ব্যবহার ডাক্তার সায়েবের। ওষুধ দিছে, এবার ভালা অইয়া যামু।’
এখানে প্রতিদিন শত শত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া ছাড়াও ‘আর্ক পিসের’ চিকিৎসকেরা নৌবাহিনী হাসপাতাল, আশার আলো এবং নৌবাহিনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিকিৎসা শিবিরেও রোগী দেখেছেন।
ছয় দিনের সফর শেষ করে ২৫ আগস্ট ফিরে গেছে ‘আর্ক পিস’। ফিরে যাওয়ার আগে অন্তত ১০ হাজার রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন এই হাসপাতাল-জাহাজের চিকিৎসকেরা। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি চিকিৎসক দলও সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল তাঁদের। আর্ক পিসের ৪৬ জন ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ১৯ জন চিকিৎসক যৌথভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ১৫০ জন রোগীর দেহে সফল অস্ত্রোপচার করেছেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চিকিৎসকদের সঙ্গে চারটি মেডিকেল সিম্পোজিয়াম করেছেন আর্ক পিসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সার্জন কমান্ডার মুহাম্মদ কবির আহমদ খান বললেন, ‘আর্ক পিস আসার ফলে আমাদের রোগীরা যেমন উপকৃত হয়েছেন, তেমনি এখানকার চিকিৎসকেরাও নানা বিষয়ে চীনের চিকিৎসকদের সঙ্গে মত ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পেয়েছেন। এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে আমাদের কাজে লাগবে।’
যদি আমাদেরও থাকত...
‘আর্ক পিস’-এর চিকিৎসা কার্যক্রম ঘুরে ঘুরে দেখার সময় যে কথাটি প্রথমেই মনে আসে তা হলো, যদি আমাদেরও থাকত এ রকম একটি হাসপাতাল-জাহাজ! ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রতিবছর কত মানুষের মৃত্যু হয় এ দেশে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলীয় অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য সড়ক যোগাযোগের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে সময়মতো উপদ্রুত অঞ্চলে পৌঁছানো কঠিন হয়ে তো পড়েই, অনেক সময় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে উপদ্রুত এলাকার লোকজনকে উদ্ধার করা বা চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা দান অসম্ভব হয়ে পড়ে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কিছু কিছু এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয় বটে, তবে তা যেমন ব্যয়সাপেক্ষ তেমনি দুরূহ। ‘আর্ক পিস’-এর মতো একটি হাসপাতাল-জাহাজ আমাদের উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে।
ভাসমান হাসপাতাল আমাদের দেশে যে একেবারে নেই, তাও নয়। বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর তিনটি জাহাজ-হাসপাতাল (রংধনু, লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ও এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ) উপকূলে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। উপকূলবাসী তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আর্ক পিসের মতো ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পরিচালনার সামর্থ্য তাদের নেই।
গত ২১ আগস্ট ঢাকায় আমাদের নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও ‘আর্ক পিস’-এর মিশন-প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল শেন হাওয়ের বৈঠকেও প্রসঙ্গটি উঠে আসে। শেন হাওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফরিদ হাবিব বলেন, ‘আপনারা সেবা ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি, আমাদের বন্ধুত্বের এই যাত্রা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবে।’
আমাদের নৌবাহিনীতে এ রকম একটি জাহাজ সংযোজন করা হলে তা দুর্যোগ-উত্তর পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার্থে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন নৌবাহিনী প্রধান।
আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের নিজস্ব একটি ভালোবাসার তরির জন্য!
জনবল ও সামর্থ্যের বিচারে আমাদের নৌবাহিনীর পক্ষেই শুধু সম্ভব এ রকম একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নেওয়া।
নৌবাহিনীর প্রধানের বক্তব্যের মধ্যেও সেই আশার বাণী শুনতে পেয়েছি আমরা।
‘আর্ক পিস’-এর চিকিৎসা কার্যক্রম ঘুরে ঘুরে দেখার সময় যে কথাটি প্রথমেই মনে আসে তা হলো, যদি আমাদেরও থাকত এ রকম একটি হাসপাতাল-জাহাজ! ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে প্রতিবছর কত মানুষের মৃত্যু হয় এ দেশে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় উপকূলীয় অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য সড়ক যোগাযোগের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে সময়মতো উপদ্রুত অঞ্চলে পৌঁছানো কঠিন হয়ে তো পড়েই, অনেক সময় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে উপদ্রুত এলাকার লোকজনকে উদ্ধার করা বা চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা দান অসম্ভব হয়ে পড়ে। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কিছু কিছু এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয় বটে, তবে তা যেমন ব্যয়সাপেক্ষ তেমনি দুরূহ। ‘আর্ক পিস’-এর মতো একটি হাসপাতাল-জাহাজ আমাদের উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে।
ভাসমান হাসপাতাল আমাদের দেশে যে একেবারে নেই, তাও নয়। বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর তিনটি জাহাজ-হাসপাতাল (রংধনু, লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ ও এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ) উপকূলে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। উপকূলবাসী তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আর্ক পিসের মতো ব্যাপক কর্মযজ্ঞ পরিচালনার সামর্থ্য তাদের নেই।
গত ২১ আগস্ট ঢাকায় আমাদের নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও ‘আর্ক পিস’-এর মিশন-প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল শেন হাওয়ের বৈঠকেও প্রসঙ্গটি উঠে আসে। শেন হাওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফরিদ হাবিব বলেন, ‘আপনারা সেবা ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি, আমাদের বন্ধুত্বের এই যাত্রা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবে।’
আমাদের নৌবাহিনীতে এ রকম একটি জাহাজ সংযোজন করা হলে তা দুর্যোগ-উত্তর পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষার্থে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে মন্তব্য করেন নৌবাহিনী প্রধান।
আমরা অপেক্ষা করছি আমাদের নিজস্ব একটি ভালোবাসার তরির জন্য!
জনবল ও সামর্থ্যের বিচারে আমাদের নৌবাহিনীর পক্ষেই শুধু সম্ভব এ রকম একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নেওয়া।
নৌবাহিনীর প্রধানের বক্তব্যের মধ্যেও সেই আশার বাণী শুনতে পেয়েছি আমরা।
0 comments:
Post a Comment