শরণার্থী শিবিরে সিরীয় নারীদের পতিতাবৃত্তি

মানবজমিন ডেস্ক: সিরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দলে দলে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে জর্ডানের শরণার্থী শিবিরে। এসব শরণার্থীর মধ্যে সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জাটারি শরণার্থী শিবিরেই ৮৩০০০ সিরিয়ান আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে দৈনন্দিন নানা চাহিদা মেটাতে অর্থের অভাবে এখন অনেকেই পতিতাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। জাটারি শরণার্থী শিবিরে প্লাস্টিকের তৈরি ছোট ছোট তাঁবুতেই নির্বিঘ্নে চলছে এ আদিম ব্যবসা। শরণার্থী শিবিরের জীবনযাত্রার অবস্থা এতোটাই করুণ যে বাবার সামনেই মেয়েকে দাঁড়াতে হচ্ছে অন্য পুরুষের সামনে। কয়েক মাস আগে সিরিয়ার দক্ষিণের সীমান্তবর্তী শহর দারা থেকে সপরিবারে পালিয়ে এসে জর্ডানের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ১৯ বছরের নাডা এবং তার পরিবার। এখন পরিবারের হাল ধরতে তাকেই অর্থ যোগাড়ে নামতে হয়েছে। তাঁবুর বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি আগন্তুকদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করছিলেন। তার বাবা সেই তাঁবুর পাশেই নীরবে দাঁড়িয়েছিলেন। নাডা একজন গ্রাহকের কাছে ৭ ডলার দাবি করলেও সেটা আলোচনাসাপেক্ষ। এভাবে তিনি দৈনিক গড়ে ৭০ ডলার করে আয় করেন। এই অর্থ দিয়েই এখন তাদের সংসার চলে। নাডার তাঁবু থেকে একটু দূরেই সিরিয়ার এক তরুণ তার স্ত্রীর জন্য গ্রাহক খোঁজ করছেন। সিরিয়ার ইদলিবে তিনি পেশায় ক্ষৌরকার হিসেবে কাজ করলেও এখন বাধ্য হয়ে তিনি স্ত্রীকে উপার্জনের জন্য রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলছিলেন ৭০ ডলারের বিনিময়ে যে কেউ তার স্ত্রীকে সারাদিনের জন্য পেতে পারে। তিনি বলেছেন- নিজের স্ত্রীকে এভাবে পথে নামাতে হবে সেটা তিনি কখনো চিন্তাও করেননি। কিন্তু সিরিয়াতে তার বাবা-মা এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে প্রতিমাসে ২০০ ডলার করে পাঠাতে হয় তাই বাধ্য হয়েই তাকে এ রাস্তা বেছে নিতে হয়েছে। প্রতিবেশী জর্ডানে সিরিয়ার শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাবার সঙ্গে সঙ্গে তাদের হতাশার পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার অর্থনীতি ভেঙে পড়ার কারণে জর্ডানে আশ্রয় নেয়া সিরিয়ার সাহায্যপ্রার্থী শরণার্থীর সংখ্যা এরই মধ্যে ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। এদের মধ্যে জর্ডানেই রয়েছে ৪১৮০০০ সিরিয়ান শরণার্থী। জর্ডানে আগত সিরিয়ার অনেক নারীই এখন জীবিকার তাগিদে জড়িয়ে পড়ছেন পতিতাবৃত্তিতে। অনেক পরিবারই জোর করে তাদের মেয়েদেরকে এ কাজে বাধ্য করছেন। অনেক নারী স্বামী ছাড়া শরণার্থী হিসেবে জর্ডানে আসায় তাদের কোন আয়- রোজগারের ব্যবস্থা না থাকায় পাচারকারী বা দালালদের খপ্পরে পড়ে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। ১২০০০০ সিরিয়ার শরণার্থী বসবাসকারী জাটারি শিবিরের মধ্যে পতিতাবৃত্তির স্পর্শকাতর অভিযোগ রয়েছে। এ শিবিরে জাতিসংঘের অর্থায়নে খাবারের রেশন ব্যবস্থা চালু থাকলেও জর্ডান সেটা তত্ত্বাবধান করছে। আর দীর্ঘ সময় ধরে রেশন দেয়ার কারণে এতেও টান পড়েছে। জর্ডানে জাতিসংঘ শরণার্থী কমিশনের প্রধান এন্ড্রু হারপার বলেছেন- আমরা এ শিবিরে পতিতাবৃত্তির কোন প্রমাণ পাইনি। তবে এ ব্যাপারে গুজব শুনেছি। তিনি বলেন- নারীদের দুরবস্থা এবং শরণার্থী সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে ত্রাণ সঙ্কটের কারণে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওই শিবিরের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেছেন- বাতিবিহীন টয়লেটগুলো রাতের আঁধারে পতিতালয়ে পরিণত হয়। আর ত্রাণকর্মীরা বলছেন- পতিতাবৃত্তির কারণে শরণার্থী শিবিরে পরিচয়বিহীন বেশ কয়েকটি শিশুর জন্ম হয়েছে। দারা থেকে আগত এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, পতিতাবৃত্তির পাশাপাশি সেখানে নারীদেরকে একেবারে বিক্রি করে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে। তিনি জানিয়েছেন, তারই এক প্রতিবেশী নিজের কন্যাকে এক সৌদিবাসীর কাছে ২০০০ ডলারে বিক্রি করে দিয়েছে। শরণার্থী শিবিরের গেটে জর্ডান পুলিশ পাহারায় থাকলেও তারা ভেতরে খুব একটা ঢোকে না। তাই ভেতরে পতিতা বা তাদের খদ্দেরদের তেমন কোন সমস্যা পোহাতে হয় না। তবে এর সঙ্গে জর্ডান পুলিশের কোন ধরনের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা সেটা জানা যায়নি।