এই ঘরোয়া হুমায়ূন আহমেদকে আর পাওয়া যাবে না। তিনি পাড়ি দিয়েছেন মহাকালের খেয়ায়। তাঁর ছবি, তাঁর লেখা, তাঁর চলচ্চিত্র—এসব সামনে রেখে গত ১৯ জুলাইয়ের পর থেকেই স্মৃতিতর্পণ চলছে মানুষ হুমায়ূন আহমেদের। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘অনন্ত জীবন যদি’ নামে তাঁর আলোকচিত্র প্রদর্শনী। জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের জীবনের নানা মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরেছেন নাসির আলী মামুন। ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের ৬৪তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে ধানমন্ডির ৬ নম্বর সড়কের গ্যালারি চিত্রকে আট দিনের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে পাক্ষিক অন্যদিন-এর তরফে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে অংশ নিয়েছিলেন নাট্যজন আলী যাকের, হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, প্রদর্শনীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপের ব্র্যান্ড মার্কেটিং পরিচালক নওশাদ করিম, অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন চিত্রকের পরিচালক শিল্পী মনিরুজ্জামান। আলোকচিত্রী দেশে না থাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। প্রদর্শনী চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
রঙিন ও সাদা-কালো মিলিয়ে ৮২টি ছবির প্রদর্শনী। হুমায়ূন আহমেদের লেখার মতো তাঁর মুখও দেশের আবালবৃদ্ধবনিতার অনেক চেনা। প্রদর্শনীতে সেই মুখচ্ছবি আছে বিভিন্ন ভঙ্গিতে। তবে যা সর্বসাধারণের অচেনা, সেই ঘরোয়া হুমায়ূন আহমেদের ছবিও আছে প্রচুর। সেটিই এই প্রদর্শনীর বড় আকর্ষণ। নুহাশপল্লীতে গাছপালার পরিচর্যা করছেন, দখিন হাওয়ায় এক দুপুরে শয়নকক্ষে বিছানায় শায়িত স্ত্রীর ছবি তুলছেন, ছবি আঁকছেন নিমগ্ন চিত্তে, গায়ে চাদর জড়িয়ে শীতের দুপুরে রোদ পোহাচ্ছেন ছাদে, সোফার কুশন মাথার তলায় দিয়ে চিত হয়ে ডুবে আছেন বইয়ের পাতায়, ২০০৫ সালে জন্মদিনে মা আয়েশা ফয়েজ চামচে করে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন, নিষাদ-নিনিতকে নিয়ে মেতে আছেন বাগান পরিচর্যায়—পাদপ্রদীপের আলোয় থাকা হুমায়ূন আহমেদের এমন অনেক আটপৌরে মুহূর্ত অন্য এক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে দর্শকদের।
এসব ছাড়া আছে তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের টুকরোটাকরা দৃশ্য। ব্যস্ত আছেন শুটিং নিয়ে। লিখছেন। ভক্ত পরিবেষ্টিত হুমায়ূন আহমেদ অটোগ্রাফ দিচ্ছেন একুশে গ্রন্থমেলায়। আরও আছে আড্ডার ছবি। বন্ধু সদ্য প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে গোসল করছেন নুহাশপল্লীর সুইমিংপুলে। মধ্যমণি হয়ে আছেন সেখানেই আয়োজিত কোনো এক গানের আসরে। মা, ভাই, পুত্র, কন্যাদের সঙ্গে পারিবারিক ছবিও আছে। আরও আছে জীবনের শেষ দিনগুলোতে নিউইয়র্কে চিকিৎসায় থাকার সময়ের ছবি। সব মিলিয়ে দর্শকেরা এই প্রদর্শনীতে তাঁদের প্রিয় লেখককে পাবেন অদেখা অজানা অনেক মুহূর্তের অন্তরঙ্গতায়।
প্রদর্শনীর ছবিগুলো ইচ্ছা হলে কিনেও নিতে পারবেন অনুরাগীরা। ছবি বিক্রির টাকা পুরোটাই দেওয়া হবে নেত্রকোনার কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদের প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠকে। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য আরও পাঁচ লাখ টাকা প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয় আবুল খায়ের গ্রুপের পক্ষ থেকে।
প্রায় চার মাস হয়ে গেল ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদ নেই। সময় বেশ দ্রুতই চলে যায়, কিন্তু মানুষের মহৎ কাজ অতিক্রম করে যায় সময়ের পরিধি। হুমায়ূন আহমেদের কাজও তা পারবে—এমন দৃঢ় আস্থার কথাই বলছিলেন প্রদর্শনীতে আসা বিদগ্ধজন ও তাঁর অনুরাগীরা। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment