১৯৭৫ সালের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শোকাবহ ১৫ আগস্ট পালিত হয়েছে। প্রথম ২১ বছর ১৫ আগস্ট পালিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অবহেলায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছয় বছর দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিল করে। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে সরকারি ছুটি পুনর্বহাল করে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করে। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সচল হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আদালতের রায় কার্যকর হয়। খুনিদের কয়েকজনের ফাঁসি হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির শোকবাণীতে বলা হয়, ৩৫ বছর পর হলেও জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী ঘাতকদের বিচার বাংলার মাটিতে সম্পন্ন হয়েছে। জাতি আজ অনেকটা কলঙ্কমুক্ত। যেসব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঘাতক আজও বিদেশে পালিয়ে রয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শোকবাণীতে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার চলছে। কিন্তু একটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম এবং এসব বিচারপ্রক্রিয়া স্তব্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
হত্যাকাণ্ডের শিকার যারা: ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছিল তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিলের প্রাণ। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।
কর্মসূচি: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন কর্মসূচি নিয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে আছে ভোরে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
সকাল সাড়ে সাতটায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল এবং সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত কর্মসূচি রয়েছে। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে দলীয় নেতারা অংশ নেবেন।
সকাল ১১টা মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। বাদ আসর দেশের সর্বত্র মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও ইফতার। মন্দির, প্যাগোড়া ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা। ১৬ আগস্ট ঢাকায় আলোচনা সভা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য দলের সব নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment