হুমায়ূন আহমেদ আমাদের মাঝে আর না থাকলেও মৃত্যুর দিন থেকেই সাইবার জগতে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। হুমায়ূনের মরদেহ নিজ দেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে এই উপস্থিতিটা যেন বেড়ে গেছে অন্য অনেক দিনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। হুমায়ূন নিজে উপস্থিত হতে হয়তো পারেননি, কিন্তু তাঁর পাঠকেরা কি তাঁকে ভুলতে পারেন! ভুলতে পারেন ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’র মতো বহুল জনপ্রিয় চরিত্রের জনক হুমায়ূন আহমেদকে। তাই তো তাঁর অজস্র ভক্ত-পাঠকই তাঁকে হাজির করিয়েছেন সাইবার জগতে। বাংলা ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক, টুইটারসহ অনলাইন পত্রিকাজুড়ে হুমায়ূন আহমেদের উপস্থিতি সহজেই জানান দেয় কতটা জননন্দিত ও পাঠকপ্রিয় ছিলেন তিনি, তাঁর শূন্যতায় মানুষ আপনজনের মতো কতটা কাঁদতে পারে।
প্রিয় লেখকের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে অনেকেই তাঁদের ফেসবুক টাইমলাইনের প্রচ্ছদ ছবিতে জুড়ে দিয়েছেন হুমায়ূনের ছবি। কেউবা প্রোফাইল ছবিতেও নিজের ছবির বদলে জুড়ে দিয়েছেন এই লেখকের ছবি। এতেই ক্ষান্ত হননি পাঠকেরা, ফেসবুক-টুইটার স্ট্যাটাসে হুমায়ূনকে নিয়ে মনের গহিনে জমানো ভালোবাসার কথা লিখে রেখেছেন পাঠকেরা। তাতে মন্তব্যও করছেন অগণিত মানুষ। অনেকে আবার প্রিয় এই লেখকের সঙ্গে তোলা ছবি আপলোড করছেন ফেসবুকে। আপলোড করা হয়েছে ভিডিও ফুটেজ, পুরোনো স্মৃতি, কথোপকথন।
বাংলা ব্লগের প্রথম কয়েকটা পৃষ্ঠা আর ফেসবুকের হোমপেজজুড়ে শুধু হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর প্রিয় উক্তি, সিনেমার ভিডিও এসব কিছু দেখে যেন মনে হচ্ছে দৃশ্যের ভেতরে হুমায়ূন আহমেদের সেই আগের মতোই সরব বিচরণ।
ফেসবুকে রিমন রহমান নামে হুমায়ূন আহমেদের এক ভক্ত পোস্টার বানিয়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের গর্ব, জাতির শ্রেষ্ঠ লেখক, আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হুমায়ূন আহমেদ স্যারের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। স্যারের মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হোক।’ এই দাবি তুলে ছবিটি বিভিন্ন জনকে ট্যাগও করা হয়েছে।
সিনথিয়া ইয়াসমিন নামে একজন তাঁর ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘যদিও তখনও আকাশ থাকবে বৈরী, কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি, যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়। এমন নয় যে আমি তাঁর অন্ধ ভক্ত কিন্তু কেন যেন তাঁর শেষ বিদায়ের দৃশ্যগুলো দেখে বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।’
বায়েজীদ ভূঁইয়া জুয়েল তাঁর ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন, ‘স্যার, আমরা আপনাকে ভুলব না, কেউ ভুলতে পারবে না। যেখানেই থাকেন, অনেক ভালো থাকবেন।’
চতুর্মাত্রিক এক বাংলা ব্লগে পলক নামে এক ব্লগার হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ‘হুমায়ূন আহমেদ, ভালোবাসাগাঁথা তোমার জন্য’ শিরোনামে বিশাল একটি লেখা লিখেছেন। কেউবা ব্লগে হুমায়ূনকে নিয়ে লিখেছেন এলিজি।
সামহোয়্যারইন ব্লগে ব্লগার ঢেউ ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’ কিন্তু ‘প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ কান্না যে আটকাতে পারছি না’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি স্মৃতিচারণা করেছেন।
‘হুমায়ূন আহমেদ এক্সক্লুসিভ ভিডিও’ শিরোনামে আসিফ ইকবাল ইউটিউবে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, মাঝে নিউইয়র্ক থেকে কয়েক দিনের জন্য দেশে ফিরে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর প্রিয় নুহাশপল্লীতে আড্ডা দিচ্ছেন। পাশে তাঁর বেশ কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী, পুত্র নিষাদ ও স্ত্রী শাওন। ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, উপস্থিত অনেকের অনুরোধে শাওন ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’ গানটি গাইছেন। আর এই গান শুনে চোখ মুছছেন জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। পরে তিনি নিউইয়র্কে তাঁর চিকিত্সা ও চিকিত্সকদের সম্পর্কে হালকা বর্ণনা দেন। এই ভিডিওচিত্রটি ইউটিউবে পোস্ট হওয়ার পরপরই তা ছড়িয়ে পড়ে হাজারো ফেসবুক ব্যবহারকারীর ওয়ালে ও ব্লগে। কেউবা আবার সেই ভিডিও লিঙ্ক অন্যের ওয়ালে বা গ্রুপে পোস্ট করেছেন সবার দেখার জন্য।
হাজারো পাঠক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও মেনে নিতে পারছে না, প্রিয় লেখক, বাংলা একাডেমীর বইমেলার প্রাণ হুমায়ূন আহমেদ তাঁদের সবাইকে ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন। তাঁরা মানতে পারছেন না, আর কোনো দিনই ‘মিসির আলী’, ‘হিমু’ বা ‘শুভ্র’র মতো আর কোনো চরিত্র তাঁর হাত দিয়ে অন্য কোনো মাত্রা পাবে না। তাই প্রিয় লেখকের বিদায়ের সময়টাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে পাঠক ও ভক্তরা তাঁকে নিয়ে এসেছেন একদম তাঁদের কাছেই, তাঁদের ফেসবুক ওয়াল, টুইটার ও বিভিন্ন ব্লগে। আজ হয়তো হুমায়ূন আহমেদ সমাহিত হবেন, চলে যাবেন অন্য ভুবনে। কিন্তু পাঠকেরা আরও কিছুদিন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে তাঁকে নিয়ে বলবেন, লিখবেন। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment