সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিতের বক্তব্য
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘রেল মন্ত্রণালয়ের সফলতা যেমন আমার ওপর বর্তায়, তেমনি ব্যর্থতাও আমার ওপরই বর্তায়। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি।’
ভিডিও: সাজিদ হোসেন
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চক্রান্ত চলছে। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষায় দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র এসেছে। সেই গণতন্ত্রের স্বার্থেই এই ঘটনার সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে পদত্যাগ করছেন।
নতুন গঠিত রেল মন্ত্রণালয়ের নানা সাফল্যের বিবরণ দিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ৯ এপ্রিল তাঁর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে (জিএম) বহনকারী গাড়িতে অর্থ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে একটি বিতর্কিত অবস্থা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থা নিয়ে তিনি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন মন্তব্য করে বলেন, ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো যোগসূত্র নেই। তারপরও আজ একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঘটনা তদন্তে প্রাথমিকভাবে দুটি কমিটি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নইলে তাঁরা আদালতে গিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা তদন্ত কাজে গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আবারও রাজনীতির অঙ্গনে তিনি নিজেকে তুলে ধরতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঘটনার সূত্রপাত ৯ এপ্রিল: ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানার মূল ফটকে ৭০ লাখ টাকাসহ রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট (ঢাকা) এনামুল হক আটক হন।
তাঁরা দাবি করেন, তাঁরা রেলমন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে তাঁদের অপহরণের লক্ষ্যে চালক আলী আজম গাড়িটি বিজিবির ফটকের ভেতর ঢুকিয়ে দেন। এরপর বিজিবির সদস্যরা টাকাসহ সবাইকে আটক করেন।
পরদিন সকালে গাড়িচালককে রেখে পিলখানা থেকে বাকিদের ছেড়ে দেয় বিজিবি। কিন্তু এরপর থেকে আলী আজমের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষ রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে আসছিল। মন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করেন।
১০ এপ্রিল, মন্ত্রী যা বলেন: রেলমন্ত্রী এদিন বলেন, এটি একটি ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠীর কাজ। জিএমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তাঁর নেই। প্রথম আলোসহ গণমাধ্যমকর্মীদের রেলমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি রাত ১০টায় ঘুমাই। মধ্যরাতে আমার সঙ্গে সাক্ষাত্ করার কোনো সুযোগ নেই।’
বিরোধী দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘একজন রাজনীতিকের জন্য পদ গ্রহণ বড় কথা নয়। বর্জন করাও সহজ। বিরোধী দলের কথায় আমি পদ পাইনি। তাই বিরোধী দলের কথায় তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না। সিদ্ধান্ত যাঁরা নিতে পারেন, সেখান থেকেই আসবে।’
১৫ এপ্রিল, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর এপিএস ওমর ফারুককে গত বুধবারই সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। গতকাল রেলমন্ত্রী হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত এবং এপিএস ফারুককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানান, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রেলমন্ত্রী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউসুফ আলী মৃধা ও এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা। নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে জরুরিভাবে তদন্ত কমিটি গঠন। এপিএসের কাছ থেকে পাওয়া সব নথি ও বক্তব্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো ও সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ করা। তদন্তের প্রয়োজনে দুদককে রেলওয়ে থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া।
তবে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে এপিএস ও রেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও এর দায় নিয়ে মন্ত্রী পদ ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন। রেলভবনে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলার সময় মন্ত্রী বিতর্কিত নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করেন।
১৫ এপ্রিল, সুরঞ্জিতকে তলব: প্রধানমন্ত্রী তলব করায় রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গতকাল রাতে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। রাত সাড়ে আটটার সময় তিনি গণভবনে পৌঁছান। রাত ১০টায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। তাঁদের মধ্যে কথা হয় প্রায় ২৫ মিনিট। তাঁদের একান্ত বৈঠকের ব্যাপারে কারও সঙ্গে কোনো কথাও বলেননি মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ নভেম্বর মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। নতুন গঠিত রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, তিনি রেলের ‘কালো বিড়াল’ খুঁঁজে বের করবেন। টাকাসহ তাঁর এপিএসের গাড়ি আটকের পর অনেকে রেলমন্ত্রীকেই সেই ‘কালো বিড়াল’ বলে মন্তব্য করে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। prothom-alo.com
0 comments:
Post a Comment