পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার নলদোয়ানী গ্রামে গত মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। আহত কিশোরীকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় বখাটে ইমরান হাওলাদার ও তার মা রানী বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরী তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তাঁকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত পাশের বাড়ির ইউসুফ হাওলাদের ছেলে আলিম পরীক্ষার্থী ইমরান। একপর্যায়ে ইমরানের পরিবার বিয়ের জন্য মেয়ের পরিবারকে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মেয়েটির পরিবার এতে রাজি হয়নি।
গত মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ওই কিশোরীর মা-বাবার বাড়ির বাইরে গেলে ইমরান তাদের বাড়িতে যায়। এরপর ইমরান একটি বঁটি, শিকল ও তালা নিয়ে কিশোরীদের ঘরে ঢুকে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। কিশোরীর হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে জানালার গ্রিলের সঙ্গে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর ইমরান বঁটি হাতে নিয়ে মেয়েটিকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। ততক্ষণে ঘরের বাইরে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে যায়। খবর পেয়ে দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহনেওয়াজের নেতৃত্বে পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ সময় বখাটের কবল থেকে কিশোরীকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায় পুলিশ ও স্থানীয়রা। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এভাবে চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এদিকে, বখাটে ইমরানের মা মেয়েটির সঙ্গে তাঁর ছেলের কাবিনের জন্য পুলিশ ও মেয়ের অভিভাবকদের চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে কৌশল হিসেবে ওই কিশোরীকে ইমরানের সঙ্গে বিয়ের আশ্বাস দেয় পুলিশ ও স্থানীয়রা। এ জন্য পুলিশ একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে বাইরে থেকে ইমরানকে দেখায়। কিন্তু ইমরানের মা ওই কাবিননামা ভুয়া বলে ছেলেকে সতর্ক করে দেন।
তখন ইমরান ক্ষিপ্ত হয়ে কিশোরীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে পুলিশকে সরে যেতে বলে। পুলিশ বাধ্য হয়ে আড়ালে অবস্থান নেয়। বিয়েতে ব্যর্থ হয়ে বেলা তিনটার দিকে ইমরান কিশোরীকে বঁটি দিয়ে কোপাতে শুরু করে। চিৎকার শুনে পুলিশ দ্রুত ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে কিশোরীকে উদ্ধার করে এবং আটক করে বখাটে ইমরানকে। পরে এ কাজে ছেলেকে সহায়তা করায় ইমরানের মা রানী বেগমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পর কিশোরীকে প্রথমে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর মঙ্গলবারই তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) মোছাব্বের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোরীর দুই হাতে অনেকগুলো কোপের আঘাত ছিল। ডান হাতের কবজির রগ কেটে গেছে। হাড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে। বাঁ হাতের একটি আঙুল রাখা যাবে কি না, সন্দেহ।
বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে ওই কিশোরীর বাবা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। এ জন্য এখনই মেয়ের বিয়ের কথা চিন্তা করিনি। কিন্তু ইমরান দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও বাড়িতে উত্ত্যক্ত করত। ইমরানের মাকে বিষয়টি জানালে তিনি আমার মেয়েকে তাঁর ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য বলতেন। কিন্তু এ নিয়ে আমার মেয়ের জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটবে কল্পনাও করতে পারিনি। ওরা আমার মেয়েকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে। আমি ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহনেওয়াজ ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় বখাটে ইমরান, তার মা রানী বেগম, ছোট ভাই ইলিয়াস ও বোন শিউলীকে আসামি করে মঙ্গলবার মামলা করেছেন ওই কিশোরীর বাবা। পুলিশ ইমরান ও তার মাকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি বঁটি ও কিশোরীকে বেঁধে রাখার কাজে ব্যবহূত শিকল ও তালা-চাবি উদ্ধার করা হয়েছে। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment