গতকাল বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জে মার্কেট দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় সাত বছরের শিশু সোহেলের। সোহেলের বাবা রিকশাচালক রতন মিয়া।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আগানগরে ছাপরা টিনশেড বাড়ির একটি ঘর নিয়েই রতন মিয়ার সংসার। যে মার্কেটটি নিয়ে সংঘর্ষ, ওই মার্কেটের পাশের সরু গলি দিয়ে কিছুদূর গেলেই বাসাটি।
গতকাল বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, উঠানভর্তি মানুষ। ঘরে বিছানায় বসে সোহেলের প্যান্ট হাতে নিয়ে বুক চাপড়ে বিলাপ করছেন মা ওজুফা।
সোহেলের ভাই লেদের দোকানের কর্মী বাবু বলেন, স্কুল থেকে ফিরে জামাকাপড় পাল্টে একটা খেলনা বাঁশি নিয়ে বাজাতে ছিল সোহেল। এরই মধ্যে মায়ের কাছে আবদার করে, হালুয়া-রুটি খাবে। মা টাকা দিলে সে হালুয়া-রুটি কিনে এনে খায়। তারপর আবারও বাঁশি বাজাতে শুরু করে। এতে বারোয়ারি বাসার অন্য ভাড়াটেরা বিরক্ত হয় এবং সোহেলকে বাঁশি বাজাতে নিষেধ করে। তখন রান্নাঘর থেকে মা সোহেলকে বাইরে গিয়ে বাঁশি বাজাতে বলেন। কিন্তু বাইরে যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে, তা বাসার ভেতরের কেউ জানতেন না।
বাবু জানান, ‘মায়ের কথা শুনে সোহেল বাসা থেকে বাঁশি হাতে বেরিয়ে গলির মাথায় যায়। সেখানে হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে তার মাথায়। স্থানীয় একজন বায়োজ্যেষ্ঠ কোনো রকমে গলি থেকে সোহেলকে উঠিয়ে বাসায় দিয়ে যান। এরপর সেখানেই পড়ে ছিল সে। বাসায় তো মা একা ছিল।’
বাবু যখন এই প্রতিবেদকদের এসব তথ্য জানাচ্ছিলেন, মা তখন বিছানায় শুয়ে কখনো কাঁদছেন, কখনো সোহেল সোহেল বলে ডাকছেন; আবার কখনো ভিড় করে থাকা লোকজনকে বলছিলেন সোহেলকে খুঁজে দিতে।
বিলাপরত মা ওজুফা বেগম বলেন, ‘আমার বাবার নাক দিয়া চাক্কা চাক্কা রক্ত পড়তাছিল। বুকডা উডাইয়া ছটফট করতাছিল। আমি বাইরে গিয়া সবার হাতে-পায়ে ধরছি, একবার হাসপাতালে নেওনের লাইগ্গা। কেউ হুনল না। তারা ইডা মারামারি করতাছে। তহনো আমার বাবার রুহডা আছিল।’
সোহেলের বাঁশিটা তখনো পড়ে ছিল বিছানার ওপরে। ক্ষণে ক্ষণে মা ওজুফার রোষ গিয়ে পড়ছিল সেই বাঁশিটার ওপর। ‘এইডাই, এই বাঁশডাই খাইল আমার সোহেলরে।’ আবার কখনো তিনি সংঘর্ষকারীদের উদ্দেশ করে বলছিলেন, ‘ওরা আমার পোলাডারে খাইল। নিজেরা মারামারি করিস কর। আমার পোলাডা কী করছিল? কেন ওরে মারলি। কেউ একবার ওরে হাসপাতালে নিস নাই। তগোর বিচার আল্লা করব।’
সোহেলের বাবা রতন মিয়ার সঙ্গে কথা হয় মিটফোর্ড মর্গে। রিকশাচালক বাবা বলেন, তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সোহেলই ছোট। স্থানীয় আমবাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীতে পড়ত সে। সোহেল ছাড়া রতন মিয়ার আর সব ছেলেমেয়ের কেউই পড়ালেখা করেনি। ভাইবোনেরা সবাই ছোটখাটো কাজ করে পরিবারের আয়-রোজগারে সহায়তা করে। সবার ইচ্ছে ছিল সোহেল লেখাপড়া করবে। এ জন্য সোহেলের প্রতি সবার আদরও ছিল বেশি। অন্য ছেলেমেয়েরা যে অভাবে বড় হয়েছে, সোহেলকে তা থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল পরিবারের সবাই মিলে। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment