যে কোনো ভাইরাস জ্বরের মতো এখানেও জন্ডিস হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা, বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। বমি ও পেটে ব্যথাও হতে পারে। প্রস্রাব হলুদ হয়। তারপর চোখে এবং বেশি জন্ডিস হলে চামড়াও হলুদ হয়ে যায়। এসব লক্ষণ খুবই সামান্য থেকে ভয়াবহ হতে পারে এবং দুই থেকে তিন সপ্তাহ স্থায়ী হয়ে সাধারণত ভালো হয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গগুলো খুবই সামান্য হয় এবং অনেক সময় রোগী তা টেরও পান না।
হেপাটাইটিস ‘বি’ রক্তবাহিত রোগ। জন্মের সময় মা থেকে নবজাতক শিশু হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত হতে পারে। ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ গ্রহণ আর যৌনমিলনের মাধ্যমেও হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা এইডস ভাইরাসের চেয়ে ১০০ ভাগ বেশি। শিশু বয়সে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণ হলে লিভারে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ ভাগ। অন্যদিকে প্রাপ্ত বয়সে এই হার মাত্র ৫-১৫ ভাগ।
দীর্ঘমেয়াদে হেপাটাইটিস বি এক সময়ে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার তৈরি করতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সিরোসিসের প্রথম দিকে রোগী শারীরিকভাবে ভালো থাকে ও সুস্থ বোধ করে। কেউ কেউ অবশ্য দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি উপসর্গে ভুগতে পারেন।
সাধারণত রক্তে ঐইংঅম পরীক্ষা করে বোঝা যায় হেপাটাইটিস বি আছে কিনা। ক্রনিক হেপাটাইটিসে ঐইংঅম ছাড়াও অহঃর ঐইব, ঐইবঅম, ঐইঠ-উঘঅ ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হয়। তবে এসব ছাড়াও হেপাটাইটিস বি-এর আরো অনেক পরীক্ষা আছে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ইনফেকশনের একেকটা পর্যায়ে একেকটা পরীক্ষার দরকার হয়। তাই সব পরীক্ষা প্যানেল হিসেবে করার কোনো যুক্তি নেই। একমাত্র লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে ভ্যাকসিন আছে তা খুবই কার্যকর। প্রাপ্ত বয়স ও শিশু প্রত্যেকেরই উচিত এ ভ্যাকসিন নিয়ে নেয়া। তবে নিতে হবে এমন একটি জায়গা থেকে যেখানে ভ্যাকসিন উপযুক্ত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয় আর বিদ্যুৎ সরবরাহও থাকে নিরবচ্ছিন্ন।
একিউট হেপাটাইটিস বি বা হেপাটাইটিস বি-এর স্বল্প মেয়াদি ইনজেকশনে তেমন কোনো ওষুধ সাধারণত লাগে না। প্রাপ্ত বয়স্ক অধিকাংশ রোগীই ভালো হয়ে যান। অন্যদিকে শিশুরা প্রায় ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে ক্রনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়। ক্রনিক হেপাটাইটিস বি-এর চিকিৎসার জন্য এখন বেশকিছু ওষুধ আছে। তবে এসব ওষুধ শুধু লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতোই ব্যবহার করতে হবে।
0 comments:
Post a Comment