আত্মহনন করা মোমিন হোসেন (২০) কোদালিয়া গ্রামের আলম হোসেনের ছেলে। মোমিনের প্রেমিকা সীমা খাতুন (১৮) মাগুরা সদর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের আবুল খায়েরের মেয়ে। তাঁদের দুজনের বাড়ি দুই জেলায় হলেও দূরত্ব আনুমানিক ৫০০ গজ।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রেমের কারণে মোমিন ও সীমা আত্মহত্যা করেছেন। কোনো পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকায় প্রশাসন ময়নাতদন্ত ছাড়াই দুজনের লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছে।
মোমিনের বন্ধু সেকেন্দার আলী বলেন, মোমিন ২০১০ সালে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ালেখা করেছে। সীমা পড়তেন শ্রীরামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে। তখন থেকে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে তাঁদের প্রেমের বিষয়টি সবাই জেনে যায়। এদিকে সীমার পরিবার মোমিনের পরিবারের চেয়ে একটু বিত্তশালী। মোমিনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে সীমাকে চাপ দেয় তাঁর পরিবার। মোমিনও তাঁর বাবা আলম হোসেনকে জানিয়ে দেন, তিনি সীমাকে বিয়ে করবেন। এতে তাঁর বাবা সম্মতি না দিলে মোমিন আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। এরপর উপায় না পেয়ে আলম হোসেন সীমার বাবা আবুল খায়েরের কাছে যান। কিন্তু আবুল খায়ের মোমিন ও সীমার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে আলম হোসেনকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেড় মাস আগে ঝিনাইদহ সদরের পাইকপাড়া গ্রামের এক ছেলের সঙ্গে সীমার বিয়ে দেয় তাঁর পরিবার।
সেকেন্দার বলেন, কাঁদতে কাঁদতে সীমা স্বামীর বাড়ি গেলেও তাঁর মন ছিল নিজ গ্রামে। সারাক্ষণ মুঠোফোনে মোমিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
সেকেন্দারের দাবি, সীমার বিয়ের পর তাঁরা বন্ধু হিসেবে উভয়কে প্রেমের সম্পর্ক ভুলে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন, কিন্তু মোমিন ও সীমা তা শোনেননি। মঙ্গলবার তিনি সারা দিন মোমিনের সঙ্গে ছিলেন। কখনো মোমিন বলেননি, তাঁরা আত্মহত্যার মতো ঝুঁকি নিতে যাচ্ছেন।
সীমার পরিবারের ভাষ্যমতে, গত রোববার সীমা তাঁর বাবার বাড়িতে আসেন। গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সীমা তাঁর বরকে মুঠোফোনে জানান, তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন এবং আর কখনো তাঁর সংসার করবেন না। সঙ্গে সঙ্গে সীমার বর শ্বশুরবাড়িতে ফোন করে নিশ্চিত হন, সীমা বাড়িতে নেই। এর পর থেকে সীমার খোঁজ শুরু করে তাঁর পরিবার। বিষয়টি জানতে পেরে মোমিনের পরিবারও মোমিনকে খোঁজা শুরু করে।
কিন্তু রাতে কোথাও তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। গতকাল সকালে কোদালিয়া গ্রামের পুকুরপাড়ে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মোমিন ও সীমার লাশ পাওয়া যায়।
সীমার চাচা জাহিদ হোসেন জোয়ার্দার বলেন, ‘মোমিন পড়ালেখা বন্ধ করে ঘুরে বেড়ায়। ওই কারণে মোমিনের সঙ্গে সীমার বিয়ে দিতে চাইনি। তবে তারা দুজন এই ধরনের ঘটনা ঘটাবে, তা কখনো ভাবিনি।’ মোমিনের বাবা আলম হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এরা একে অপরকে কতটা ভালোবাসে, তা বুঝতে পেরে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম। ওই সময় তাদের দুজনকে মেনে নিলে আজ এই পরিণতি হতো না।’ প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment