ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে কেনিয়ায় ১৯৫০ সালে শুরু হয়েছিল মাও মাও অভ্যুত্থান। এতে অংশ নেওয়ার অপরাধে নিনগিকে একটি ব্রিটিশ শ্রমশিবিরে বিনা অভিযোগে নয় বছর আটকে রাখা হয়। চালানো হয় অত্যাচারের স্টিম রোলার। পরে তাঁকে মৃত ভেবে ফেলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর প্রায় ৬০ বছর পার হয়েছে। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় নিনগিকে।
নিনগির বর্তমান বয়স ৮৪ বছর। সফেদ শুভ্রকেশী নিনগি চান, ওই ভয়ঙ্কর নির্যাতনের ঘটনায় যুক্তরাজ্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুক। ভুক্তভোগীদের জন্য গঠন করুক একটি কল্যাণ তহবিল। এ দাবিতে তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও তিনজন, যাঁরা ওই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। বর্তমানে লন্ডনে ওই মামলার বিচার চলছে।
মামলার বাদী চারজন বলেন, ব্রিটিশ সেনাদের ওই বর্বরোচিত আচরণের মধ্যে ছিল নিয়মিত নির্যাতন, ধর্ষণ এবং আটক ব্যক্তিদের দিয়ে কঠোর কায়িক পরিশ্রম করানো। ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও অশীতিপর ওই বৃদ্ধদের সময় ফুরিয়ে আসছে। আইনজীবীদের ভয়, বিচারের রায় হয়তো তাঁরা দেখে যেতে পারবেন না।
আইনজীবী মার্টিন ডে বলেন, একে একে দিন, সপ্তাহ, মাস অতিবাহিত হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের দাবির বিষয়ে কোনো সুরাহা হচ্ছে না। ভয় হচ্ছে, যখন রায় হবে, তখন হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা জীবিত থাকবেন না।
১৯৫২ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত চলা ওই অভ্যুত্থানে ১০ হাজারের বেশি লোক নিহত হন। তবে অনেকের মতে, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। যুক্তরাজ্য বলছে, আইনগতভাবে এখন তারা ওই অভিযোগের দায় নেবে না। কারণ, ১৯৬৩ সালে দেশটির স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে তার দায়ভার কেনিয়া সরকারের ওপর চলে গেছে।
নিনগি বলেন, ‘একসময় তারা (ব্রিটিশরা) ১২ জনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছিল, তবে তাদের ধারণা ভুল। কারণ, ওই ১২ জনের মধ্যে আমিও ছিলাম।’ তিনি দাবি করেন, অভ্যুত্থানের সময় তিনি কখনোই বন্দুক বহন করেননি। তিনি দেশের স্বাধীনতা এবং ভূমির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠায় শুধু প্রচারাভিযানে অংশ নেন।
নিনগি আরও বলেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যের কাছে ক্ষতিপূরণ চাই এ কারণেই যে প্রত্যেক সাদা চামড়ার মানুষকে যাতে আমাদের শয়তান (ডেভিল) হিসেবে না ভাবতে হয়।’ এএফপি।
0 comments:
Post a Comment