তবে জিনস-টিশার্ট বা কোর্ট-টাই পরা ক্লিন শেভের সেই সাইফ আর নেই। লিবিয়ার অন্তর্বর্তী পরিষদের (এনটিসি) যোদ্ধারা গ্রেপ্তার করার পর সাইফের একটি ছবিতে তাঁকে লম্বা দাড়ি, মাথায় পাগড়ি আর লিবিয়ার ঐতিহ্যবাহী আলখাল্লা পরা দেখা যায়। কথাবার্তায়ও ছিলেন অনেক শান্ত।
লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ওবারি থেকে গ্রেপ্তারের পর সাইফকে বিমানে করে জিনতান শহরে নেওয়া হয়। জিনতানের যোদ্ধাদের ১৫ জনের একটি দল সাইফকে গ্রেপ্তার করে। সেই দলের আহমেদ আম্মার জানান, ওই চেহারায় সাইফকে প্রথমে চিনতেই পারেননি তাঁরা।
সাইফকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আহমেদ বলেন, জিনতানের যোদ্ধাদের কাছে তথ্য ছিল, গাদ্দাফির অনুগত একটি দল ওবারির দিকে আসছে। তবে তাঁরা কারা, তা নিশ্চিত হতে পারেনি। গ্রেপ্তারের দিন ওবারিতে দুটি গাড়িতে থাকা কয়েকজনকে চ্যালেঞ্জ করে যোদ্ধারা। আম্মার বলেন, ‘আমরা গাড়ি দুটি দেখে তাদের থামাতে আকাশের দিকে ও গাড়ির সামনে গুলি ছুড়ি। গাড়ি থেমে গেলে আমাদের অধিনায়ক আবদেল জওয়ানি আলী আহমেদ গাড়িতে থাকা প্রধান যাত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি কে?” উত্তর আসে, “আবদেল সালাম”। অধিনায়ক ভালোভাবে তাঁকে পর্যবেক্ষণ করে আমার কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন, “আমার মনে হয়, ওই ব্যক্তিই সাইফ আল-ইসলাম।”’
আহমেদ আম্মার বলেন, ‘এরপর আমি গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম। গাড়ির ওই ব্যক্তিকে আমি বললাম, আমি জানি আপনি কে, আমি আপনাকে চিনি।’
আম্মার বলেন, ‘সাইফ শুরুতে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন তাঁকে হত্যা করা হবে। আমরা তাঁর সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করি। তাঁকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। তাঁকে বলি, আমরা আপনাকে আঘাত করব না। সাইফ যোদ্ধাদের কাছে জানতে চান, তাঁরা কারা। কোথা থেকে এসেছেন।’
সাইফকে ওবারি থেকে বিমানে করে জিনতানে নেওয়ার সময় তাঁকে শান্তভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। সাইফের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিসহ তিনটি আঙুলে ব্যান্ডেজও দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে তাঁকে শান্তভাবে এনটিসির যোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপ করতেও দেখা যায়।
সাইফকে হস্তান্তরের আহ্বান আইসিসির
লিবিয়ার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কাছে হস্তান্তর করতে হবে। গত শনিবার আদালতের একজন কর্মকর্তা এ কথা বলেন।
আইসিসির একজন মুখপাত্র জানান, লিবিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে আগামী সপ্তাহে ওই দেশে যাবেন প্রধান কৌঁসুলি লুই মোরেনো-ওকাম্পো। এরই মধ্যে সাইফের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
সাইফকে গাদ্দাফির উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চায় আইসিসি।
সাইফ আল-ইসলাম, তাঁর বাবা ও গাদ্দাফির নিরাপত্তা-প্রধান আবদুল্লাহ আল-সেনুসির বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা শত শত গাদ্দাফিবিরোধী বিক্ষোভকারীকে হত্যা ও গ্রেপ্তার করেছে। এএফপি ও রয়টার্স।
0 comments:
Post a Comment