দুই বেলা পেট পুরে খেতে পারবে এই আশায় রোমেলাকে পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বাসায় কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন তার গরিব বাবা-মা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ওই দম্পতি তার ওপর চালিয়েছে নির্মম নির্যাতন। গরম পানি ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে রোমেলার পুরো শরীর। গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে তার মুখে, পিঠে।
জানা গেছে, রোমেলাদের বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুর ইউনিয়নের গোটেংরা গ্রামে। বাবা মো. ইয়াজ উদ্দিন দিনমজুর। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে রোমেলা সবার ছোট।
রোমেলার বাবা ইয়াজ উদ্দিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে সাঁথিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। এ অভিযোগে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আয়ুব আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর। পরে এসপির নির্দেশে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ করে তা সীতাকুণ্ড থানায় পাঠিয়ে দেয়।
ইয়াজ উদ্দিন জানান, অভাবের সংসারে সন্তানদের ঠিকমতো খাওয়াতে-পরাতে পারেন না। গত মার্চ মাসে পাশের গ্রামের আনছার আলী রোমেলার জন্য জেলার বেড়া উপজেলার নান্দিয়ারা গ্রামের মো. শাহেদ আলীর বাসায় কাজ ঠিক করেন। শাহেদ আলী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডু থানায় কর্মরত আছেন। কাজের জন্য শাহেদ আলী রোমেলাকে সিতাকুণ্ডু নিয়ে যান। কিন্তু রোমেলাকে নিয়ে যাওয়ার পর গত সাত মাসে বিভিন্নভাবে মেয়ের খোঁজ জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ইয়াজ উদ্দিন। পরে তিনি বিষয়টি আনসার আলীকে জানান। এর পর আনসার আলী পুলিশ দম্পতির সঙ্গে রোমেলার বাবার যোগাযোগ করিয়ে দেন। রোমেলার বাবা মেয়েকে ফেরত চাইলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা প্রথমে দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে পরে এলাকাবাসীর চাপে গত বুধবার সন্ধ্যায় অসুস্থ রোমেলাকে তার বাবার কাছে তুলে দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোমেলার পুরো শরীরে ক্ষত। মাথার চুল উঠে গেছে। মুখ, পিঠ ও ঠোঁটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা সৃষ্টি হয়েছে।
রোমেলা প্রথম আলোকে বলে, ‘শাহেদ আলীর স্ত্রী সুইটি বেগম আমাকে সব সময় মারপিট করত। রুটি ছ্যাঁকা খুন্তি ও চামচ গরম করে পেটাত। কয়েকবার আমার গায়ে গরম পানি ও গরম তরকারি ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছে। একবার পিটুনিতে মুখ কেটে গেলে সুইটি বেগম সুঁই-সুতা দিয়ে কাটা জায়গা সেলাই করে দেয়।’
হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ফাইরোজ বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাপজনিত কোনো কারণে মেয়েটির শরীরে ঘা তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে এসআই শাহেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েটিকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। বাজার থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনায় সে আহত হয়েছে। এ ছাড়া পানি গরম করার সময় গরম পানি পড়ে তার শরীর পুড়ে যায়।’
পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর বলেন, পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। prothom-alo
0 comments:
Post a Comment