৫ অক্টোবর মারা গেছেন প্রযুক্তির দিকপাল জবস। তাঁর দেড় মাস আগেই অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন প্রযুক্তির মানচিত্র পাল্টে দেওয়া অ্যাপল কম্পিউটার, ম্যাকিনটোশ, আইপড, ম্যাক, আইফোন ও আইপ্যাডের জনক। তাঁর মৃত্যুর পর একটিই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে—জবসের পর কে? জবসের অবর্তমানে কে নেবেন তাঁর জায়গা?
সত্তরের দশকের শুরুতে বন্ধু ওজনিয়াককে সঙ্গে নিয়ে প্রযুক্তিকে বদলে দেওয়ার যাত্রা শুরু করেছিলেন স্টিভ জবস। তথ্যপ্রযুক্তির প্রায় প্রতিটি বাঁকেই রয়েছে কোনো না কোনোভাবে জবসের অবদান। কম্পিউটারকে করপোরেট দুনিয়ার বাইরে টেনে এনে সাধারণ মানুষের পড়ার টেবিলে বসিয়েছিলেন জবসই। প্রোগ্রাম লিখে লিখে কম্পিউটারের ব্যবহার বদলে একে করেছেন সহজ ও সুন্দর। এককথায় এই প্রযুক্তিবিদকে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল, টমাস এডিসন, হেনরি ফোর্ডের পাশাপাশি খুব সহজেই বসিয়ে দেওয়া যায়।
জবস প্রতিষ্ঠিত অ্যাপল নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। অ্যাপল এখন দুনিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও দামি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যার বাজারমূল্য হাজার কোটি ডলার। জবসের অবদানে ধন্য এই অ্যাপল এখন কেবল একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই নয়, এটি একটি মহাযজ্ঞও বটে। হাজার হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান তো অ্যাপল করেছেই, প্রযুক্তির দুনিয়ায় এই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র। জবসের মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন হয়ে গেল কি না, এই শঙ্কা এখন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে অনেককেই।
বিশাল প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও অ্যাপল কিন্তু আগামী বেশ কিছুদিন জবসের ঋণ বহন করে চলবে। তাঁর উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো আরও অনেক দিন অ্যাপলকে জুগিয়ে যাবে ব্যবসায়িক রসদ। কিন্তু এরপর কী? আইফোন একদিন পুরোনো হয়ে যাবে, আইপড হারিয়ে ফেলবে আবেদন। অ্যাপলে কি এমন কেউ আছেন, সেই সময়ের জন্য, যিনি নিজের বুদ্ধিমত্তা ও ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি দিয়ে অ্যাপলকে পথ দেখিয়ে যাবেন? জবসের মৃত্যুর পর অ্যাপল নিয়ে উত্কণ্ঠাটা মূলত এই ব্যাপারটিকে ঘিরেই।
জবসের মৃত্যুর পর অনেকের নামই আলোচিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আসছে টিম কুকের কথা। যিনি এই মুহূর্তে অ্যাপল ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ও জবসের অত্যন্ত আস্থাভাজন। আলোচনায় রয়েছেন অ্যাপলের দীর্ঘদিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইফোন অপারেটিং সফটওয়্যারের অন্যতম প্রধান স্কট ফোর্সটল, প্রতিষ্ঠানটির বিপণন প্রধান ফিল শিলার ও আইপ্যাড তৈরির অপারেশন প্রধান জোনাথন ইভস। তাঁরা সবাই অ্যাপলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি। কিন্তু প্রশ্নটা হলো তাঁরা কেউ কি ‘স্টিভ জবস’?
তাঁরা অবশ্যই স্টিভ জবস নন। তাঁরা সবাই আলদা ব্যক্তি। আলাদা আলাদা তাঁদের বিকাশ। তবে সবাই যোগ্য ও জ্ঞানী মানুষ। কিন্তু স্টিভ জবস নিজেকে এমন একটি উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, যেখানে পৌঁছানো যেকোনো সাধারণের পক্ষে সম্ভব নয়। জবস সম্পূর্ণ আলাদা, অদ্বিতীয় এক মানুষ।
আগেই বলা হয়েছে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল, টমাস আলভা এডিসন, রাইট ভ্রাতৃদ্বয় ও হেনরি ফোর্ডের কাতারেই বসানো যেতে পারে স্টিভ জবসকে। অ্যাপল একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান হতে পারে, কিন্তু আরেকজন স্টিভ জবস তৈরি করার ক্ষমতা অ্যাপলের মানবসম্পদ বিভাগের নেই। ডিগ্রি দিয়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে জবসদের, এডিসনদের তৈরি করা যায় না—এই ধ্রুব সত্যটি মেনে নিয়েই অ্যাপলকে এগিয়ে যেতে হবে। (হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত জেফরি সোনেনফেল্ডের ‘দ্য নেক্সট জবস’ কলাম অবলম্বনে)
0 comments:
Post a Comment