‘ড্রাগন রাজা’ বলে পরিচিত অক্সফোর্ডের স্নাতক নামগিয়েল ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। অভিষেক ঘটার পরই তিনি ভুটানে গণতন্ত্রের পথ খুলে দেন। তাঁর নববধূ পেমা একজন বৈমানিকের মেয়ে। রূপ ও গুণ দিয়ে রাজার মন কেড়ে নেওয়ায় দেশে তিনি বহুল আলোচিত।
রাজ জ্যোতিষীদের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গতকাল স্থানীয় সময় সকাল আটটা ২০ মিনিটে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সময় কাঁধে হলুদ চাদর জড়ানো রাজা নামগিয়েল প্রাচীন মঠটির উঠানে ঢোকেন। উঁচু সিঁড়ি বেয়ে তিনি ভেতরের দিকে এগিয়ে যান। এর কয়েক মিনিট পর ২১ বছর বয়সী কনে পেমাও সেখানে এসে পৌঁছান। তাঁর গায়ে ছিল ভারী স্বর্ণালংকার ও বিয়ের জাঁকালো পোশাক। এরপর লাল পোশাক পরা ভিক্ষুদের উপস্থিতিতে এগিয়ে চলে বিয়ের অনুষ্ঠান। ঢাকঢোল, বাদ্যবাজনা ও সংগীতে মুখরিত হয়ে ওঠে মঠ। রাজা নামগিয়েল একটি স্বর্ণখচিত মুকুট পরিয়ে দেন রানির মাথায়। বিয়ে উপলক্ষে সারা দেশে তিন দিন ধরে উৎসব চলবে।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিয়ের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান শেষে রাজা ও রানি হাতে হাত ধরে অনুষ্ঠানে আসা সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পেমার সঙ্গে পড়েছেন, রাজার এমন একজন ঘনিষ্ঠ স্বজন ইওয়াং পিনদারিকা রানি সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি খুব মিষ্টি স্বভাবের আর যত্নশীল। শিশুদের খুব ভালোবাসেন। আমি নিশ্চিত যে রাজাকে তাঁর দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালনে তিনি খুব সহযোগিতা করবেন।’
সরাসরি সম্প্রচারিত এই বিয়ের অনুষ্ঠান সারা দেশের সাত লাখ মানুষ দেখেছে। বিয়ে উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে নাচ, গান ও খাওয়া-দাওয়ার ধুম পড়ে যায়।
বিয়ের অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিদেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন না। ভুটানি রাজারা বরাবরই প্রজা-অন্তঃপ্রাণ বলে পরিচিত। একসময় প্রত্যন্ত এলাকার ওই পাহাড়ি রাজ্য যুদ্ধবাজদের দখলে ছিল। ভুটানের রাজ পরিবার সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। ভুটান কখনো কারও উপনিবেশ ছিল না। শত শত বছর ধরে বিশ্বসম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছে তারা। এটি তারা স্বেচ্ছায়ই করেছে। এখনো দেশটির শাসক ও জনতা বাইরের এবং বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে সচেষ্ট। ভুটানই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চেয়ে সামগ্রিক জাতীয় সুখকেই বড় করে দেখা হয়। এএফপি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
0 comments:
Post a Comment