ভোরেই মৌমাছিরা বেশি চালাক

ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠার পরের সময়টার কথা বলি। সাধারণত এই সময়ই আমরা সারাদিনের কাজের পরিকল্পনা করি। সারাদিন কী করব আর কী করব না, এর একটা খসড়া আমরা মনে মনে এঁকে নেই ভোরবেলায়। আর আমাদের মতোই চিন্তা অন্য সবাই মানে প্রাণিকুলের আরও অন্য প্রাণীরাও করে এটা নিশ্চয় বলবেন। ভোরটা হল দিনের সবচেয়ে সজীব ও সি্নগ্ধ সময়। ওই সময় সবার মন ও মস্তিষ্ক ভারমুক্ত থাকে। কারণ সম্ভবত রাতের গভীর ঘুম ও বিশ্রাম এবং ভোরের প্রকৃতির কোমল প্রভাব। শুধু মানুষের বেলায় নয়, প্রকৃতির অন্য প্রাণীদের জন্যও হয়তো সেটাই সত্যি। আর তাই একদল গবেষক কেন একথা বলবেন, যেসব মৌমাছি সকাল সকাল মধুর খোঁজে বেরিয়ে পড়ে তারা, যারা দেরি করে বের হয় তাদের চেয়ে বুদ্ধিমান? তারা বলেছেন, সকাল সকাল বেরিয়েপড়া মৌমাছিরা সবচেয়ে ভালো ফুলে গিয়ে সবচেয়ে ভালো মধুটাই আহরণ করতে পারে।

আর রাতে ফোটা ফুলের তরতাজা গন্ধটাই তাদের বেশি চালাক করে তোলে। এক হাজার মৌমাছির ওপর গবেষণা করে পাওয়া এ তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে বিহেভিয়ারাল ইকোলজি অ্যান্ড সোসিওবায়োলজি নামের একটি জার্নালে। সকালবেলার শান্ত পরিবেশই হয়তো এসব মৌমাছির মগজে আলাদা এক ধরনের শক্তি জোগান দেয়। ফলে গন্ধ শুঁকে সবচেয়ে ভালো ফুলটা খুঁজে মধু সংগ্রহ করে তারা। মৌমাছিদের নিয়ে অবশ্য এর আগেও গবেষণা হয়েছে। সেসব গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশিরভাগ ফুল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই পাপড়ি মেলে দেয়। সদ্য ফোটা ফুলের তরতাজা এ গন্ধটাই ভোরে ওঠা মৌমাছিদের মস্তিষ্কে এমন কিছু ক্রিয়া করে, যা তাদের আলাদা কোনো বোধশক্তি দেয়। তবে নতুন ফোটা ফুলের তরতাজা গন্ধের স্মৃতিটা মাথায় রাখতে গেলে মৌমাছির মতো ক্ষুদ্র প্রাণীকে অনেকটা শক্তি ব্যয় করতে হয়। আর এ হারানো শক্তি ফিরে পেতে হলে তাকে দিনমান একটু ‘বোকাটে’ হয়ে থাকতে হয়। মৌমাছির শেখার শক্তি বোঝার জন্য গবেষকরা প্রায় এক হাজার মৌমাছি নিয়ে গবেষণা চালান। এগুলোকে কয়েকটি দলে ভাগ করে প্রত্যেক দলকে দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ফুলে বিচরণের জন্য ছেড়ে দেন। জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব কনস্ট্যানজের প্রফেসর গিওভানি্ন গালিজিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত গবেষক দলটি এরপর বিভিন্ন সময়ে ছেড়ে দেওয়া মৌমাছিদের কার্যকলাপ, কোন ফুলে মধু বেশি বা কোন ফুল একেবারেই মধুহীন, তা চেনার ক্ষমতার তারতম্য দেখেন গভীর মনোযোগের সঙ্গে। তাতেই দেখা গেছে একদম ভোরে ছেড়ে দেওয়া মৌমাছিগুলো প্রায় নির্ভুলভাবেই মধু আছে এমন ফুলগুলোয় প্রথমবারেই গিয়ে বসতে পেরেছে।

ডেসটিনি