এটা খাদ্যের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া যা ইমিউন রিলেটেড নয় এবং বিভিন্ন ওষুধজনিত কারণে যেমন হিস্টামিন, টাইরামিন বা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট, বিপাকীয় বা মেটাবলিক যেমন ল্যাকটোজ স্বল্পতা বা অন্যান্য মেকানিজম যেমন খাদ্যে উপসি'ত বিষ যা টকসিন এবং খাদ্যে মেশানো বিভিন্ন কেমিক্যালস-এর কারণে হয়।
ক) ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সজনিত ডায়রিয়া
মায়ের দুধ বা টিনজাত দুধে ল্যাকটোজ বেশি থাকলে বা শরীরে এনজাইম কম হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। সাধারণত মায়ের দুধের মধ্যে ২০০ মিলিমোল/লিটার ল্যাকটোজ থাকে যা হজমের পর গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজে রূপান্তরিত হয় অন্ত্রের ব্রাশ বর্ডারে উপসি'ত একটি এনজাইমের কারণে। বেশির ভাগ ল্যাকটোজ রূপান্তর এনজাইমস্বল্পতার কারণে যে ডায়রিয়া হয় তা কোনো লক্ষণ প্রকাশ করে না। কারও কারও ক্ষেত্রে পেট মোচড়ানো, ব্যথা, পেট ফুলে বা ফেঁপে যাওয়া, পেটে বাতাস বেশি তৈরি হওয়া ও বাতাস বের হওয়া, পেটে গড়গড় শব্দ হওয়া এবং বারবার পায়খানা হয় দুধ বা দুধজাতীয় খাবার খাওয়ার পর। পায়খানা পরীক্ষা করে রিডিউসিং সাবস্টেন্স উপসি'ত থাকলে এ রোগ নির্ণীত হয় এবং ল্যাকটোজ কম বা ল্যাকটোজমুক্ত খাবার দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়।
অন্যান্য সুগারের কারণে ডায়রিয়া
অহজমযোগ্য শর্করা বা সর্বিটলের কারণে অসমোটিক ডায়রিয়া হতে পারে যা চিনির পরিবর্তে ব্যবহূত সুইটনারের কারণে হয়ে থাকে।
ফ্রুকটোজ বেশি গ্রহণের কারণে (বেশি করে ফলের জুস গ্রহণ করলে) ডায়রিয়া হতে পারে। এগুলো পরিহার করলে এসব ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
খাদ্যে অ্যালার্জি
খাদ্যে অ্যালার্জি ইমিউন মেডিয়েটেড রোগ। এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইমিউনোগ্লোবিউলিন আইজিই অ্যান্টিবডির কারণে হয়ে থাকে এবং টাইপ-১ হাইপার ডেনসিটিডি প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশ পায়। শতকরা ২০ ভাগ লোক বিভিন্ন খাদ্যের বিপরীতে অ্যালার্জিতে ভোগেন। সবচেয়ে বেশি খাদ্যে অ্যালার্জি রয়েছে এমন সব খাবার হলো-চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, বেগুন, দুধ ও দুধজাত খাবার, ডিম, সয়া, শেলযুক্ত মাছ। এসব খাদ্য গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে বা কিছুক্ষণের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির সারা শরীরে বা স্থানীয়ভাবে লাল র্যাশ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট এবং কোনো কোনো সময় মৃত্যু হতে পারে। কারও কারও ফ্রেশ ফ্রুট জুস (যার মধ্যে বেনজয়িক এসিড থাকে) গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে চুলকানি, র্যাশ, ঠোঁট এবং গলার মধ্যে ফুলে যায়। ফুড অ্যালার্জির জন্য রোগ নির্ণয় খুব কঠিন তবে চামড়ার অ্যালার্জির টেস্ট, সিরাম আইজিই অ্যান্টিবডি নির্ণয় রক্তে ইউসিনোফিলের পরিমাণ বাড়া এবং কোন কোন খাবার খেলে এগুলো হয় তা জানলে এ রোগ নির্ণয় সম্ভব। এসব রোগীর উপরের লক্ষণগুলো ছাড়াও ডায়রিয়া, বমি ভাব, বমি, বুক ধড়ফড় করা এবং নিঃশ্বাসের কষ্টও হতে পারে। যেসব খাবার খেলে ফুড অ্যালার্জি হয় সেগুলো পরিত্যাগ করা, ফুড অ্যালার্জি হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো অ্যান্টিহিস্টামিন এবং কর্টিকোস্টেরয়েড গ্রহণ করা, জীবন সংকটাপন্ন হলে আইসিইউতে স্থানান-র করে চিকিৎসা করতে হবে।
ফুড পয়জনিং বা খাদ্যে বিষক্রিয়া
বহুদিন ধরে সংরক্ষিত খাবার পরবর্তী সময়ে গ্রহণ করলে এ ধরনের খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে। সাধারণত ক্লস্ট্রিডিয়াম বুটোলিনাম নামক স্পোরযুক্ত ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই বিষক্রিয়া হয়। সাধারণত টিনজাত মাংস, সালমোন মাছ, সবজি, মধু এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান- হয়ে বুটোলিজম নামে মারাত্মক বিষক্রিয়া তৈরি করে। এর ফলে আক্রান্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক পেটের পীড়া, উভয় পাশের ক্রনিয়াল নিউরোপ্যাথি এবং সঙ্গে আস্তে আস্তে নামতে থাকা হাত-পায়ের দুর্বলতা, ঢোঁক গিলতে বা খেতে কষ্ট হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা বা দুই প্রতিচ্ছবি দেখা এবং শ্বাসকষ্ট বা শ্বসন প্রণালী অবশ হয়ে যাওয়া। সাধারণত জ্বর থাকে না। রক্তচাপ স্বাভাবিক এবং স্বাভাবিক বা কম হূদস্পন্দন বা পালস থাকে। এসিসটেড ভেন্টিলেশন জেনারেল সাপোর্টিভ ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে পলিভালেন্ট অ্যান্টিটকসিন দিলে রোগী ভালো হয়ে যায়। কালচার করে ক্লস্ট্রিয়াম বুটোলিনামে রোগ শনাক্তকরণ করা হয়। সঙ্গে রক্তের টিসি, ডিসি পরীক্ষা করতে হয়। কোনো কোনো সময় যে ব্যক্তি খাবার কাটছে, রান্না করছে তার হাতে উপসি'ত বিভিন্ন জীবাণু বিশেষত ই-কোলাইয়ের কারণে খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে এবং সঠিক এবং দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে। কিছুদিন আগে জার্মানি ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ই-কোলাইজনিত খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে ৩০-৩৫ জন লোকের মৃত্যু হয়েছে। এটা হয়েছিল শসা যা ই-কোলাই দিয়ে সংক্রমিত হয়েছিল খাওয়ার কারণে। এ জন্য কাঁচা সালাদ জাতীয় ফলমূল সব সময়ই ভালো করে ধুয়ে তারপর খেতে হয়। এই ই-কোলাই বায়োটেরোরিজমের একটি অস্ত্র। এ জন্য পৃথিবীর উন্নত দেশে এর সংক্রমণের বিপরীতে প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সব সময়ই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
উপসংহার
এ কথা সত্য যে খাবার ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। কিন্তু খাবার গ্রহণের আগে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ধুয়ে কেটে রান্না করে না খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া বা প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এছাড়া যেসব খাবারে অ্যালার্জি হয় যেমন চিংড়ি মাছ, বেগুন, গরুর মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাত দ্রব্য, শৈল মাছ এগুলো পরিত্যাগ করতে হবে। খাদ্যে বিভিন্ন সুগারের উপস্তিতির বা এনজাইমের অভাবে ডায়রিয়া এবং ডিসেন্ট্রি হতে পারে। এগুলো পরিহার করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বেশি দিন ধরে সংরক্ষিত টিনজাত মাছ, মাংস, সবজি না খাওয়াই ভালো। খেলে খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে। অর্থাৎ খাবার সম্পর্কে একটু সচেতন হলে এবং প্রতিরোধব্যবস্থা গ্রহণ করলে খাদ্যে বিষক্রিয়া এবং অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
লেখকঃ বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
0 comments:
Post a Comment