আরেকটি আশ্চর্যজনক দিক হলো, আকারে ছোট হলেও লুসির মস্তিষ্কের গাঠনিক কাঠামো একেবারে আধুনিক মানুষের মতো। লুসির বুড়ো আঙ্গুলও এখনকার মানুষের বুড়ো আঙ্গুলের মতোই লম্বা। এ বৈশিষ্ট্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। লম্বা বুড়ো আঙ্গুল থাকা বিবর্তনে এগিয়ে থাকার নিদর্শন। যেসব প্রাণীর এ বৈশিষ্ট্য ছিল, এরা অন্যদের চেয়ে অনেক দ্রুত বিবর্তনে সভ্যতার দিকে এগিয়েছে। কেননা লম্বা আঙ্গুল প্রাণীকে যন্ত্রপাতি বা হাতিয়ার বানানো ও ব্যবহারের সুবিধা দেয়। যাদের এ বৈশিষ্ট্য নেই তারা প্রকৃতির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ও অনেক বেশি অসহায়।এ ছাড়া লুসি ও তার সঙ্গে পাওয়া শিশুটির মস্তিষ্ক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অস্ট্রেলোপিথেকাস সেডিবা প্রজাতির অন্তর্ভুদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ ও মস্তিষ্কে এদের অবস্থান আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের মতোই। বিশেষ করে এদের মস্তিষ্কের অরবিটোফ্রন্টাল রিজিওন এবং ফ্রন্টাল লোব আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের কাঠামোর মতোই সুগঠিত ও সুবিন্যস্ত ছিল। আর এসব অংশই মূলত ‘মাল্টিটাস্কিং’-এর মতো কঠিন বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রক তথা মস্তিষ্কের দক্ষতার পরিচায়ক। ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়াটারস্রান্ডের গবেষক ক্রিস্টিয়ান কার্লসন মন্তব্য করেন, ‘এ থেকে আমরা এটি বলতে পারি, এখন আমরা আধুনিক মানুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা তথা চিন্তা ও সৃজনশীলতার যে ক্ষমতা লক্ষ করি, তা তখন থেকেই শুরু হয়েছে।’
শক্ত দক্ষ হাত : জার্মানির ম্যাঙ্ প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এভল্যুশনারি অ্যানথ্রোপলজির গবেষক ট্রেসি কিভেল জানিয়েছেন, লুসির আঙ্গুলগুলো বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, অস্ট্রেলোপিথেকাসরা হাতের কাজে দক্ষ ছিল। লম্বা ও শক্ত আঙ্গুলের কারণে তাদের পক্ষে দৃঢ় মুষ্টি ও প্রয়োজনীয় হাতিয়ার নির্মাণ সম্ভব ছিল। লুসির মস্তিষ্ক ও হাতের কাঠামোর ভিত্তিতে যাবতীয় বিশ্লেষণে এটি নিশ্চিত, এরা জটিল ধরনের কাঠামো ও ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাতিয়ার ব্যবহারেও দক্ষ ছিল। ওই সময়ের অন্য অনেক প্রজাতির চেয়ে এরা তাই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলাতেও অনেক বেশি সমর্থ ছিল, যার সবই আধুনিক মানুষের সঙ্গে মিলে যায়।
0 comments:
Post a Comment