মণিপুরে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট (এএফএসপিএ) বাতিলের দাবিতে ২০০০ সালের নভেম্বরে ইরম শর্মিলা প্রথম অনশনে যান। সেই থেকে আজও তাঁর প্রাত্যহিক অনশনে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। যদিও কর্তৃপক্ষ তাঁকে জোর কিছু পুষ্টিকর উপাদান ও বহুমুখী ভিটামিন খাওয়ায়, তা সত্ত্বেও কারাগারের মধ্যেই শর্মিলার অনশন চলছে।
আত্মহত্যার চেষ্টার জন্য শর্মিলাকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। আইন অনুসারে তাঁকে প্রতিবছরই ছেড়ে দেওয়া হলেও অনশন ত্যাগ না করার জন্য বারবার গ্রেপ্তার করা হয়।
দুর্নীতিবিরোধী সমাজকর্মী আন্না হাজারের অনশন শর্মিলাকে আবার আলোচনায় এনেছে। অনেকেই আন্নার সঙ্গে তাঁকে তুলনা করছেন। তবে এতে তিনি অসন্তুষ্ট নন। বরং আন্নার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা অনেক। আন্নার প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেন, ‘আমি তাঁর আন্দোলনকে শ্রদ্ধা করি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম একটি মহত্ কাজ। তিনি আমাকে দিল্লিতে তাঁর অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমি সেখানে যেতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু আমি কারাবন্দী। তিনি মুক্ত মানুষ, যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারেন। আমি এখানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানাই। তিনি ও তাঁর সমর্থকদের এখানে শুভেচ্ছা জানাই। ভারতের জনগণ যদি আমাদের সমর্থনে এগিয়ে আসে, আমার দাবি এখনই পূরণ হবে।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্নার বিজয়কে শর্মিলা তাঁর সংগ্রাম শেষ হওয়ার শুরু হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করছি অবশেষে সেই সময় এসেছে।’
শর্মিলার বড় ভাই ইরম সিংহাজিত্ তাঁর বোনের সংগ্রাম সম্পর্কে বলেছেন, ‘একদিন সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠবে এবং অনুধাবন করবে যে একজন মেয়ে ন্যায়ের জন্য তাঁর ২৮ বছর বয়স থেকে অনশন করছেন।’
ভারতে আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে (এএফএসপিএ) নিরাপত্তা বাহিনীকে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ফলে সন্দেহের ভিত্তিকে নিরাপত্তা বাহিনী যেকোনো ব্যক্তিকে আটক, জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেপ্তার ও হত্যা করার অধিকার ভোগ করে। বিক্ষুব্ধ মণিপুর রাজ্যেও এই কালো আইনটি জারি রয়েছে। ফলে এখানে প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ এ আইনের বলি হচ্ছে। ১১ বছর আগে মণিপুরের মালম গ্রামে আসামের রাইফেল কমান্ডোদের হাতে ১০ বেসামরিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার দুই দিন পরেই অনশন শুরু করেন শর্মিলা।
শর্মিলা বলেছেন, আইন বাতিল না করা পর্যন্ত তিনি তাঁর সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন। তারপরই ফিরে যাবেন সাধারণ জীবনে। ঘর বাঁধবেন প্রিয় মানুষটির সঙ্গে। আউট লুক ইন্ডিয়া অবলম্বনে।
0 comments:
Post a Comment